অগ্নি মহড়ার নীতিমালা কি?

অগ্নি মহড়ার নীতিমালা কি? অগ্নি নির্বাপন পদক্ষেপ কি?

অগ্নি নিরাপত্তা:

শ্রম নিবিড় রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস ইন্ডাট্রিজ এর অগ্নি মহরা নিরাপত্তা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অগ্নি দূর্ঘটনা এড়ানো ও অগ্নি নির্বাপনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিুর্লিখিত ব্যবস্থাদি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা প্রতিটি শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগনকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সে লক্ষে আমরা প্রতি মাসে এক বার অগ্নি নির্বাপক মহরা এর আয়োজন করে থাকি। Fire Related Article in English …

কঠিন পদার্থের / কাপড়ের আগুন ঃ

আগুনের উৎপত্তির জন্য যে সমস্ত উপাদানগুলির সম্মনয় বিবেচ্য তা হল দাহ্য বস্তু, তাপ ও অক্সিজেন। উপরোক্ত তিনটি উপাদানের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার  ফলেই আগুনের সৃষ্টি হয়। আগুন নির্বাপন নীতির মূল বিষয় হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় আগুনের সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ আগুনের তিনটি উপাদানের এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া এর মধ্যে যদি কোন একটিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় বা অপসারন করা যায় তাহলে নির্বাপন হবে। এটাই হচ্ছে অগ্নি নির্বাপনের মূল নীতি। সাধারনত পানি বা অইঈ / উঈচ অগ্নি নির্বাপনযন্ত্র ব্যবহার কওে কাপড়, কাগজ, কাঠ ইত্যাদিও আগুন নেভানো যায়। এ ছাড়া ও ভেজা কাপড় দিয়ে অথবা কম্বল দিয়ে ও এই আগুন নেভানো যায়।

তরল পদার্থের আগুন ঃ

অগ্নিকান্ডের প্রধান কারন হচ্ছে অসাবধানতা। অসাবধনতার কারনে মূহুর্তের মধ্যে ভয়াভহ অগ্নিকান্ডের সুচনা করতে পারে। সকল প্রকার আগুন একই প্রকারে নির্বাপন করা সম্ভব নয়। দাহ্য বস্তুর প্রকার ভেদের উপর অগ্নি নির্বাপন মাধ্যম নির্ভর করে। এই আগুন সাধারনতঃ  তেল বা পেট্রোল থেকে উৎপন্ন হয়। পানি দিয়ে এই আগুন নেভানোর চেষ্টা করা মোটেই উচিৎ না।

বৈদ্যুতিক আগুন ঃ

বৈদ্যুতিক তাওে শর্ট সার্কিট থেকে অথবা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে এ আগুনের উৎপত্তি হয়। এ ধরনের আগুনে কখনো পানি জাতীয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা য়ায় না কারণ এতে বিদ্যুতায়িত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই এ জাতীয় আগুন নিভানোর জন্য সার্কিটব্রেকার ও মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। পাউডার টাইপ এক্সটিংগুইশার বা কার্বন-ডাই-অক্সাইড  এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে হবে।

অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটলে নিুলিখিত বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে ঃ

  • ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সংগে ভিতÍ নেয়া যাবে না।
  • কাপড় অথবা ভেজা টাওয়েল দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে।
  • যদি কার্বন- ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয় তবে নাকে বা গলায় ধোঁয়া প্রবেশের ব্যপাওে সর্তক থাকতে হবে।
  • সকল দরজা জানালা খুলে দিতে হবে।
  • সবাই এক সংগে বের হবার জন্য দরজার দিকে যেতে তাড়াহুড়া করা যাবে না।
  • লাইন ধরে বেরুতে হবে।
  • জরুরী নির্গমন পথ অথবা সহজে পাওয়া যায় এমন নির্গমন পথ দিয়ে বের হতে হবে।

অগ্নি মহড়ার নীতিমালা

অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানি একটি মাধ্যম। পানি ছাড়া তাপ জনিত সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। আবার কিছু কিছু দাহ্য পর্দাথ  আছে যেখানে পানি ব্যবহার করা যায় না, যেমন তেল জাতীয় গ্যাস, অথবা বিদ্যুৎ।

  • অগ্নিকান্ডজনীত কারণে ঘন্টা/সাইরেন বাজানোর সাথে সাথে সকল শ্রমিক মেশিন সুইচ বন্ধ করে চলাচলের রাস্তায় এসে দাঁড়াবে।
  • কারখানা থেকে বর্হিগমনের সময় সারিবদ্ধ ওখলাবদ্ধভাবে বাহির হইবে।
  • এসময় শ্রমিকরা নিজ অবস্থানে থেকে সমগ্র কারখানা পর্যবেক্ষন করিবে কোথায় অগ্নিকান্ড সংঘঠিত হয়েছে?
  • কারখানার যে অংশে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে  সে অংশে কর্মরত শ্রমিকগনকে আগে বাহির হইতে সহায়তা করিবেন।
  • অতঃপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অংশের শ্রমিকরা কারখানা হইতে বাহির হইবে।
  • অগ্নি নির্বাপনে দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা সকল শ্রমিক কারখানা হইতে বাহির হয়েছে কিনা নিশ্চিত হইবেন।
  • সকল শ্রমিক ফ্লোর ত্যাগ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোন শ্রমিক কারখানা আঙ্গীনা ত্যাগ করিবে না।
  • প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মীগন আহত শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করিবে।
  • যে সকল শ্রমিক দেরীতে বাহির হইবে তার কারন উৎঘাটন করতঃ তাদেরকে অগ্নিমহড়া বিষয়ক ব্রিফিং প্রদান করিবে।

অগ্নি নির্বাপনের চারটি মাধ্যম আছে, সেগুলো নিম্নরুপঃ

(১) দাহ্য বস্তু সীমিত করন পদ্ধতিঃ  আগুনলেগে গেলে এই পদ্ধতিতে অগ্নি নির্বাপন সহজতর হয়।

(ক) আগুনের নিটক থেকে দাহ্য বস্তু সরিয়ে নেয়া অথবা আগুনকে দাহ্য বস্তু থেকে সরিয়ে নেয়া।

(২) তাপ সীমিত করন পদ্ধতিঃ  ক্ষেত্র বিশেষ এই প্রক্রিয়ায় আগুনে পানি  নিক্ষেপ করে তাহা সীমিত করে অগ্নি নির্বাপক করা যায়।

(৩) অক্সিজেন সীমিত করন পদ্ধতিঃ  অক্সিজেন সীমিত করে আগুন নির্বাপন করা যায়। এক্ষেতে কার্বনডাই অক্সাইড, ইত্যাদি  ব্যবহার করা যায়।

(৪) রাসায়নিক বিক্রিয়ার যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন করন পদ্ধতিঃ  আগুন লাগার তিনটি উপাদনের সাথে যতক্ষন পর্যন্ত না রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে ততক্ষন আগুন লাগবে না। সুতরাং রাসায়নিক বিক্রিয়া সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই আগুন থাকবে না। আগুনে পাউডার নিক্ষেপ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হয়।

অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালা

  • সার্বিক অগ্নি নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্লোরে কর্মী নির্গমনের জন্য দুটি প্রশস্ত সিড়ির ব্যবস্থা রহিয়াছে।
  • কারখানার বহির্গমনের দরজা সমূহ সকল সময়ের জন্য খোলা রাখা হয় এবং কাজ চলাকালীন সময় কখনও বন্ধ রাখা হয় না।
  • অগ্নি নির্বাপনের জন্য একটি সু-সংঘটিত এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অগ্নি নির্বাপক দল সার্বক্ষনিক ভাবে নিয়োজিত রাখা হয়েছে।
  • অগ্নি নির্বাপক দলের সদস্যদের সনাক্তকরনের ব্যবস্থা রহিয়াছে।
  • কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে এবং তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও চেক করা হয়।
  • জরুরীর অবস্থার ক্ষেত্রে কর্মস্থল ত্যাগের জন্য চিহিৃত ও বাধা মুক্ত চলাচলের রাস্তা নির্দিষ্ট রাখা হইয়াছে।
  • জরুরীর অবস্থার সময় নিকটস্থ ফায়ার ষ্টেশনে সংবাদ দেওয়ার জন্য নোটিশ বোর্ডে ও ফ্লোরে জরুরী ফোন নম্বর প্রদশর্নের ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে।
  • মাসে কম পক্ষে দু’বার ফায়ার ড্রিল করা হয়।

অগ্নি নির্বাপন পদক্ষেপ

  • আগুন দেখা মাত্র ঋরৎব অষধস বাজাতে হবে।
  • দ্রুত ইলেকট্রিক সুইচ বন্ধ করতে হবে।
  • মাইকিং এর মাধ্যমে সকল শ্রমিককে সতর্কতার সহিত বাহির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া।
  • নিয়মিত ফায়ার ড্রিল মহড়ায় অংশ গ্রহণ করা।
  • কোন প্রকার চধহরপ (ভয় ভীতি) বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা।
  • স্থানীয় দমকল বাহিনী ও থানা পুলিশকে খবর দেওয়া।
  • অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি চেক করে লিষ্টে সাইন করা।

Posted

in

by

Tags:

Comments

6 responses to “অগ্নি মহড়ার নীতিমালা কি? অগ্নি নির্বাপন পদক্ষেপ কি?”

Leave a Reply