লোক অপসারণ পরিকল্পনা

অগ্নিকান্ড থেকে লোক অপসারণ পরিকল্পনা এবং আহত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতিগুলো কি কি

অগ্নিকান্ড থেকে লোক অপসারণ পরিকল্পনা

সংজ্ঞাঃ অগ্নিকান্ড থেকে লোক অপসারণ পরিকল্পনা সমুহ কি কি – দুর্ঘটনায় আক্রাšত ভবন থেকে আটকে পড়া লোকজনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও  পদ্ধতিগতভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নাম ইভাকিউয়েশন বা লোক অপসারণ। কারখানা ভবনের প্রতিটি কক্ষে অন্যুন দু’টি করে বহির্গমন পথ থাকতে হবে এবং এগুলো এমনভাবে অবস্থিত থাকবে যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের স্থান থেকে বহির্গমন পথ পর্যন্ত যুক্তিসংগত বাধাহীনভাবে এবং স্বচ্ছন্দে পৌঁছাতে পারে। যে ক্ষেত্রে কারখানা ভবনটি বা কারখানা ভবনের অংশ বিশেষ একতলা এবং যেখানে কোন সময়ে অন্যূন ২০ জন লোক কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে ভবনের ভিতরে বা বাইরে কমপক্ষে একটি স্থায়ীভাবে নির্মিত শক্ত সিঁড়ি রাখতে হবে এবং এটি নীচ তলা পর্যন্ত সরাসরি এবং বা বাধাহীন যাতায়াতের ব্যবস্থা সম্বলিত হবে। …

লোক অপসারণ পরিকল্পনা

আগুন লাগলে বের হয়ে যওয়ার জন্য ব্যবহৃতব্য কারখানার প্রত্যেকটি সিঁড়ির সঙ্গে মজবুত হ্যান্ড রেইল যুক্ত থাকবে এবং সিঁড়িটির একদিক খোলা থাকলে সেদিকে এবং সিঁড়ি দু’দিকে খোলা থাকলে উভয় দিকে হ্যান্ড রেইল থাকবে।  বিপদে লোক অপসারণ করার জন্য অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং   সে পরিকল্পনা অনুসারে লোক অপসারণ অনুশীলন ও মহড়া করতে হবে, যাতে বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ফলপ্রসূ হয়। কারখানা হিসাবে নির্মিত ভবনে বা কারখানা হিসাবে ব্যবহার করার জন্য রূপান্তর করা হলে সে ভবনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত অতিরিক্ত শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে- নিচে আটকে পড়া লোকদের নিরাপদে বের করার ধারাবাহিক পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া হলোঃ

  • জরুরী অবস্থায় কেউ কাউকে ওভারটেক করা ঠিক হবে না, তাতে পড়ে গিয়ে পদদলিত হবার সম্ভাবনা থকে। এজন্য যে আগে আছে তাকে আগেই যেতে দিতে হবে।
  • সিড়ি/ইমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে নামার সময় শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আস্তে আস্তে নামতে হবে।
  • যেহেতু আগুন উর্ধমুখী, যে তলায় আগুন লেগেছে সে তলার লোক প্রথম নামবে। যেমন তিন তলায় আগুন লাগলে সেখানকার লোক প্রথম নামবে। তারপর তার উপর দিকের লোক নামবে যথা- চার, পাঁচ, ছয়তলা ইত্যাদি। এভাবে উপর তলার সব লোক নামার পর দোতালা ও একতালার লোক বের হবে সবশেষে।
  • আগুনের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ফায়ার এলার্ম বাজাতে হবে। কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট একজনকে এ দায়িত্ব দিতে হবে।
  • আগুন থেকে আত্মরক্ষামূলক কোন সিঁড়ি সমতল  থেকে ৪৫০ কোণের চেয়ে বেশী কোণে নির্মান করা যাবে না।বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। এ কাজটি করার জন্যও একজন নির্ধারিত থাকবে।
  • ফায়ার সার্ভিসকে ১৯৯ বা ৯৫৫৫৫৫৫ নাম্বারে আগুনের সংবাদ দিতে হবে। এ সংবাদ পৌঁছানোর জন্য পূর্ব থেকেই লোক নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে।
  • ফায়ার এক্সটিংগুইশার এর সাহায্যে আগুন নিভানোর চেষ্টা করতে হবে। এজন্য পূর্ব থেকেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং অগ্নি নির্বাপক দল মজুদ রাখতে হবে।
  • পি এ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকল শাখার শাখা প্রধানকে আগুনের সংবাদ পৌঁছাতে হবে। এ সংবাদ দেবার জন্য একটি কন্ট্রোর সেন্টার থাকতে হবে যেখানে পাবলিক এড্রেস সিস্টেম মজুদ থাকবে।
  • ইমারজেন্সির সময় লিফ্ট ব্যবহার করা যাবে না।কমপক্ষে একটি সিঁড়ি অগ্নি প্রতিরোধক মাল মশলা দ্বারা নির্মিত হবে । সকলকে নিচের দিকে নামতে হবে।
  • নামার সময় সাধারণ সিড়িসহ অবশ্যই ইমারজেন্সি এক্সিট ব্যবহার করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ইমারজেন্সি এক্সিটের সিড়ি মালামাল রেখে আবদ্ধ রাখা হয়, তাতে জরুরী অবস্থায় লোক অপসারনে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য সব সময় ইমারজেন্সি এক্সিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • যে সিড়ির কাছাকাছি আগুন থাকবে তা ব্যবহার করা ঠিক হবে না, কারণ ধোঁয়া ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে।
  • কারখানা ভবনের ভিতরের প্রতিটি হয়েষ্ট পথ  লিফ্ট  পথ  অগ্নি প্রতিরোধক মাল-মশলা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে এবং হয়েষ্ট বা লিফ্টে প্রবেশপথ অগ্নি প্রতিরোধক মাল-মশলা দ্বারা নির্মিত দরজা যুক্ত হবে। পর থেকে নিচে লাফ দেওয়া উচিত হবে না।
  • জরুরী অবস্থায় নিরাপত্তা কর্মীদের অবশ্যই টর্চ বা ইমারজেন্সি লাইট ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, জরুরী অবস্থায় ভবনের ভিতর অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।

লোক অপসারনে অগ্রাধিকারঃ

জরুরী অবস্থায় আটকে পড়া লোক অপসারণ করার সময় নিচে লেখা অগ্রাধিকার অনুসরণ করা উচিতঃ

  • শিশু ও সšতান সম্ভবা মা
  • বৃদ্ধ লোক
  • মহিলা
  • অফিস স্টাফ
  • অফিসার
  • শাখা প্রধান
  • নিরাপত্তা কর্মী।

আহত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতিঃ

কারখানা ভাগের কোন অংশ আগুন থেকে আত্মরক্ষামুলক সিঁড়ির ১৫০” (যাতায়াতের পথ সহ)-র বেশী দূরত্ব থাকবে না ।দুর্যোগের কারনে লোক আহত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। যে সব লোক  আহত হয়ে থাকে, তারা নিজে নিজে বিপদগ্রস্থ এলাকা থেকে নিরাপদ এলাকায় গমনের জন্য বের হতে পারে না। তাদের অপসারণ করার জন্য অবশ্যই  জরুরী উদ্ধার পদ্ধতির মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে।

জরুরী উদ্ধার পদ্ধতি সম্পর্কে পাঠ পরিকল্পনা-১০ এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। জরুরী উদ্ধার পদ্ধতিসমূহ নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে, যাতে বিপদের সময় বাস্তবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণতঃ অজ্ঞান ব্যক্তিদের অপসারণ করার জন্য স্ট্রেচার ব্যবহার করা যেতে পারে। এ কাজগুলো প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কমীগণকেই করতে হবে।

স্ট্রেচার/ব্যাকবোর্ডঃ

বিপদগ্রস্থ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে আহতকে বহণ করার জন্য স্ট্রেচার এবং ব্যাকবোর্ড এর বিকল্প নেই। এ্যাম্বুল্যান্সে স্ট্রেচার একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী। স্ট্রেচার ছাড়া রোগী পরিবহণ কল্পনাই করা যায় না।অনুরূপ কোন বহির্গমন পথ প্রস্থে ২’-৮” এবং উচ্চতায় ৬’-৬” এর কম হতে পারবে না। ব্যাকবোর্ড স্ট্রেচারের সর্বাধুনিক সংস্করণ। স্ট্রেচার কাঠ এবং লোহার ফ্রেমে তৈরি হয়ে থাকে। ব্যাকবোর্ড সাধারণতঃ স্প­ীন্ট রেজিস্ট্যান্ট কাঠ বা কৃত্রিম পদার্থ দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। ব্যাকবোর্ড আহতের শরীর থেকে ক্ষরিত রক্ত শোষণ করে না।

 স্ট্রেচারের পরিমাপঃ

(১)       দৈর্ঘ্য – ৭ ফুট ৯ ইঞ্চি,

(২)      প্রস্থ – ২ ফুট,

(৩)      ডি রিং এর উচ্চতা – ৪ ইঞ্চি,

ব্যাকবোর্ড এর পরিমাপঃ ব্যাকবোর্ড দু’ধরনের

(১)       লং ব্যাকবোর্ড এর দৈর্ঘ্য ঃ ৬-৭ ফুট

(২)      শর্ট ব্যাকবোর্ডঃ সাধারণত ঘাড় ও মেরুদন্ডে আঘাত প্রাপ্ত রোগীকে গাড়ির ভেতর থেকে নিরাপদে বের করার জন্য শর্ট ব্যাকবোর্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ব্যাকবোর্ড ব্যবহার করার সময় অবশ্যই রোগীর ঘাড়ে সার্ভিক্যাল করার ব্যবহার করতে হব্।ে এর দৈর্ঘ্য ঃ ৩-৪ ফুট।

সারাংশ

অগ্নিকান্ড থেকে লোক অপসারণ পরিকল্পনা সমুহ – যে ক্ষেত্রে কোন কারখানা ভবনে বা কারখানা ভবনের কোন অংশে নীচতলার উপরে কোন সময় ২০ বা ততোধিক ব্যক্তি কাজ করেন অথবা যেখানে দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় বা জমা রাখা হয়, অথবা কারখানা ভবন বা এর অংশ ভূ-সমতলের নীচে অবস্থিত, সে ক্ষেত্রে পালানোর উপায়ে মধ্যে ভবনের ভিতরে বা বাইরে স্থায়ীভাবে কমপক্ষে দু’টো মজবুত এবং পৃথক সিঁড়ির ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত থাকবে এগুলো একতলা পর্যন্ত সরাসরি এবং বাধাহীন যাতায়াতের ব্যবস্থা সম্বলিত হবে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

9 responses to “অগ্নিকান্ড থেকে লোক অপসারণ পরিকল্পনা এবং আহত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতিগুলো কি কি”

Leave a Reply