অগ্নি মহড়ার নীতিমালা কি?

অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা সমূহ গুলো কি কি ?

অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা

সংজ্ঞাঃ মানব সভ্যতা যখন তিমিরে তখনও মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখেছিল প্রয়োজনের তাগিদে। পাথরে পাথরে ঘষে জ্বালাতো আগুন নামক এক তাপ বা  শক্তিকে। পরিমিত তাপ,অক্সিজেন এবং দাহ্য বস্তুর মিলিত রূপ এর সমন্বয়ে যে আকার ধারন করে তাই হচ্ছে আগুন।  এই নীতি মালার সঠিক প্রয়োগ এবং ব্যবহারের লক্ষে কার্যকরী পরিষদ একটি অডিট টীম গঠন করবেন। অডিট টীম  কারখানার সকল সেকশন এর সকল স্থান পর্যবেক্ষন ও নিরীক্ষন করবেন। অডিটকালে অডিটরগন কারখানার কোথায়ও অগ্নি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা লক্ষ্য করলে তা লিখিত আকারে প্রতিবেদন তৈরী করে এজি এম (এইচ আর এন্ড কমপপ্লাইন্স) এর নিকট দাখিল করবেন। …

উদ্দেশ্য ঃকারখানা এলাকায় অগ্নিকান্ড সমুদয় ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে পারে। এর কারণে গুরুতর আহত হবার এমনকি মৃত্যূর ঘটনাও ঘটতে পারে। তারপরও যে কোনো মূল্যে মানসম্মত ও উন্নত ডিজাইন ও উপকরণ ব্যবহার করে কারখানায় অগ্নি দূর্ঘটনার ঝুকি শুন্য পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং জ্বান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যই এই নীতিমালা প্রনীত হয়। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, সম্পদের সুরক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা।

পরিধি ঃ প্রতিষ্ঠানের সকল বিল্ডিং, ঘর, গোডাউন, স্টোর, গাড়ী, গ্যারেজ, পাওয়ার  প্লান্ট, বয়লার রুম সহ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন সকল স্থান। একটি নীতিমালাটি প্রয়োগ, ব্যবহার নিয়ন্ত্রন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিলে কার্যকরী পরিষদ তা সনাক্ত করে এ জি এম (এইচ আর এন্ড কমপপ্লাইন্স) এর নিকট পেশ করবেন। এ জি এম (এইচ আর এন্ড কমপ¬াইন্স) আভ্যন্তরীন মিটিং অথবা  উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন।

লক্ষ্যঃ আগুন নামক এই ভয়াল  দানবীয় শক্তির থাবা থেকে পরিত্রানের লক্ষে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ,অগ্নি দূর্ঘটনায় অত্র কারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোম্পানীতে অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণোয়ণ করা হয়েছে। কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ তাদের নির্ধারিত কর্তব্য অনুসারে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যেমে অত্র কারখানাকে অগ্নি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করনার্থে  সকল পদক্ষেপ গ্রহনে বদ্ধপরিকর। তারপরেও যদি কারখানার কোন সেকশনে বা স্থানে  কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় তাহলে সেটি সনাক্ত করতে হবে।

বাস্তবায়ন ঃএইচ. আর বিভাগের তত্বাবধানে বিভাগের সদস্যগন ইলেক্ট্রিক, কনস্ট্রাকশন, নিরাপত্তা ও প্রডাকশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগন এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সমন্বয়, প্রশিক্ষন প্রদান, ব্যবস্থা গ্রহন ও তদারকির মাধ্যমে এই নীতিমালার বাস্তবায়নের জন্য দায়বদ্ধ।

ফিডব্যাক ও কন্ট্রোল ঃ

এই পলিসি কারখানায় বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ সর্বদা  সচেতন এবং সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহন করে। এর পরও যদি পলিসি বাস্তবায়ন না হয় বা বাস্তবায়নের পথে কোন বাধাঁর সস্মুখীন হয়, তবে সদা নিয়ন্ত্রন করার জন্য কার্যকরী পরিষদ ও নির্বাহী পরিচালক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এমনকি মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

আগুন লাগার কারন সমূহ ঃ

  • বৈদ্যুতিক গোলোযোগ (সর্ট সার্কিট)।
  • বয়লার, গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ।
  • মেশিন,যন্ত্রপাতি অবিরাম চলনের ফলে সৃষ্ট মাত্রাতিরিক্ত তাপ।
  • দিয়াশলাই, লাইটার, সিগারেট ইত্যাদির মাধ্যমে সৃষ্ট আগুন।

অন্যান্য কারন।

অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সমূহঃ

এই নীতিমালা প্রনয়ন ও বস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় এবং যদি অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা  জোরদার করতে কোন পদ্ধতির পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন,বিয়োজন এর প্রয়োজন হয় তাহলে কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ/উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ  আলোচনা সাপেক্ষে তা সংশোধনী আনতে পারবে।

  • লুজ ওয়ারিং বন্ধ করা।
  • বৈদ্যুতিক লাইন,সুইচবোর্ড,প্যানেল বক্স ইত্যাদির যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন।
  • জেনারেটর,বৈদ্যুতিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদির যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন।
  • বৈদ্যুতিক লাইন ও যন্ত্রপাতির উপর/সঙ্গে দ্রব্যাদি না রাখা।
  • বয়লার,গ্যাসলাইন এর যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন।
  • প্রতিষ্ঠানের সকল গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার,ইঞ্জিনের যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন ও গাড়িতে ধুমপান বন্ধ রাখা।
  • দিয়াশলাই,লাইটার,সিগারেট ইত্যাদি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভিতর প্রবেশ বন্ধ করা।
  • সকল স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবস্থা রাখা।
  • সকল স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার হোজ পাইপ/রিল এর ব্যবস্থা রাখা।
  • সকল স্থানে অগ্নি নির্বাপনের জন্যে ড্রাম ভর্তি পানি,বালতি ও বালুভর্তি বালতি রাখা।
  • প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লক কাটার,ফায়ার বিটার,গ্যাস মাস্ক,গ্লাভস এবং ট্রেরের ব্যবস্থা রাখা।
  • প্রতিটি ফ্লোরে একাধিক গেট এর ব্যবস্থা এবং কর্মকালীন সময়ে গেট খোলা রাখা।
  • প্রতিটি গেটে ইর্মাজেন্সী একজিট ও ফ্লোরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইর্মাজেন্সী লাইট এর ব্যবস্থা রাখা।
  • প্রতিটি ফ্লোরে একাধিক ফায়ার এ্যলার্ম ও দৃশ্যমান ফায়ার এ্যলার্ম সুইচের ব্যবস্থা রাখা।
  • আইন নির্ধারীত সংখ্যক সদস্যকে অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধার বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সর্বদা প্রস্তুত রাখা।
  • আইন নির্ধারীত সংখ্যক / তদাতিরিক্ত ফায়ার ড্রিল এর মাধ্যমে সকলকে অগ্নিকালীন সময়ে দ্রুত বহির্গমনের বিষয়ে প্রশিক্ষন দানের মাধ্যমে সতর্ক রাখা।
  • ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশন, হসপিটাল ইত্যাদিও ফোন নম্বও সমূহ দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন ও প্রদর্শন।
  • প্রতিটি ফ্লোরে সহজে দৃশ্যমান স্থানে একাধিক এভাকেশন প্লান স্থাপন।
  • প্রতিটি ফ্লোরে উজ্জল আইলস মার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা এবং আইলস সর্বদা বাধা মুক্ত রাখা।
  • ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স সর্বদা আপডেড রাখা।

অগ্নি প্রতিরোধ সরঞ্জামাদিঃ প্রতিটি ফ্লোরেই পৃথকভাবে অগ্নি সরঞ্জামাদি সংরক্ষণ করা  আছে। যেমনঃ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র,পানির পাইপ লাইন,অগ্নি সর্তকতার ঘন্টা,ফায়ার মা¯ক,লক কাটার,পানির ড্রাম,পানির বালতি,বালির বালতি,স্ট্রেচার ইত্যাদি ফ্লোরের বিভিন্ন পয়েন্ট মজুদ আছে।

প্রশিক্ষণঃ  প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেকশনে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদেরকে বাংলাদেশ ফায়ার

সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা   হয়ে থাকে।প্রতিটি ফ্লোরেই অগ্নি নির্বাপন দল নির্বাচন করে  প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। উক্ত সদস্যদের পরিচিতির জন্য নোটিশ বোর্ডে ছবি এবং প্রত্যেকের পৃথকভাবে দায়িত্ব বন্টন করা আছে।এছাড়া ফায়ার ফাইটাররা ফ্লোরে কর্মরত অবস্থায় ফায়ার ব্যাচ পরিধান করে থাকে। প্রতি মাসে অগ্নি মহড়ার মাধ্যমে ও অগ্নি বিষয়ক  প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

উপসংহারঃ  কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগনকে কর্মস্থলে সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোম্পানী ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব সঠিক বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।


Posted

in

by

Comments

3 responses to “অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা সমূহ গুলো কি কি ?”

Leave a Reply