অগ্নী নিরাপত্তা ঃ
আগুন, তৈরী পোষাক শিল্পে একটি প্রধান সমস্যা যা নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারে তৈরী পোষাক ও এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে, শেষ করে দিতে পারে শ্রমিকদের মূল্যবান জীবন। ৩০% কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষন দিবে। সকল শ্রমিকের জন্য সাধারনভাবে প্রশিক্ষনের উপাদান হিসাবে দেয়ালে লিফলেট/ পোষ্টার লাগাতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানের অগ্নি প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কর্মচারী দিয়ে ফায়ার সাব-কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষন ও পুনঃ প্রশিক্ষন দিতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তার প্রশিক্ষন সংক্রান্ত সকল রেকর্ড সংরক্ষন করতে হবে। এই ভয়াবহ আগুনকে প্রতিরোধের জন্য ব্যাবিলন গ্রুপের “ফায়ার সেফটি পলিসি” নামে লিখিত কৌশল আছে যা নিম্নে দেওয়া হলো ঃ Also check english version …
- কারখানার প্রতিটি সেকশন থেকে বের হওয়ার দরজা কারখানায় কাজ চলাকালীন সময়ে খোলা থাকে যাতে সব দরজা দিয়ে সহজে বের হওয়া যায়।
- সাধারণ বর্হিগমন পথ ছাড়া অগ্নিকান্ডের সময় বের হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জরুরী বর্হিগমনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জরুরী বর্হিগমন পথ আছে এবং এগুলো এমন ভাবে অবস্থিত যাতে প্রত্যেক ব্যক্তির তার কাজের স্থান থেকে বর্হিগমন পথ পর্যন্ত বাধাহীন ভাবে এবং স্বচ্ছন্দে পৌছাতে পারে।
- কারখানায় নিযুক্ত প্রতিটি শ্রমিকের জন্য অগ্নিকান্ড সম্পর্কে কার্যকর এবং সহজে শ্রবণযোগ্য উপায়ে হুসিয়ারী সংকেত দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
- আগুন লাগলে দ্রুত কারখানায় এসে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয় এ জন্য স্থানীয় ফায়ার ব্রিগেড ইউনিটের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
- কারখানার প্রতিটি সেকশনে প্রয়োজসীয় সংখ্যক একটি করে ফায়ার হোজ পাইপ আছে ।
- প্রত্যেক ফ্লোরে স্থানীয় ভাষায় লিখিত প্রতিটা আইটেম নির্দেশ করে নির্গমন নক্সা থাকবে, যাতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার হোস, প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স, পানির ট্যাংক, বাকেট থাকবে এবং ”আমি এখানে” শব্দসমূহ দ্বারা নিজের অবস্থান বুঝাবে।কারখানায় কার্বন-ডাইঅক্রাইড, ড্রাই পাউডার, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড নির্মিত যথেষ্ট পরিমান বহন যোগ্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র আছে ।
- কারখানার প্রত্যেক বিভাগে নিযুক্ত শ্রমিকদের এক চতুর্থাংশকে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
- অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষনকে আরো কার্য কারী করার জন্য প্রত্যেক মাসে কমপক্ষে একবার করে কারখানায় অগ্নিনির্বাপক মহরার আয়োজন করা হয়।
- আগুন লাগলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করার জন্য কারখানায় “ফায়ার ফাইটিং টিম” ও “রেসকিউ টিম ” নামে দু টি টিম আছে।
- কারখানার জন্য বিপদজনক হওয়ার যুক্তিসংগত যথেষ্ট কারণ থাকায় কারখানার অভ্যন্তরে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অগ্নি নিরাপত্তা (ঋরৎব ঝধভবঃু) ঃ আগুনের কারনে যে ধরনের ক্ষয় ক্ষতি হয় তা কখনো আন্দাজ করা যায় না। অগ্নিকান্ড থেকে নিরাপদ থাকার দুটি উপায় রয়েছে, যেমন – আগুনের সূত্রপাত হতে না দেয়া এবং অগ্নিকান্ড হলে পরিকল্পনা মোতাবেক নির্বাপন করে ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা। অগ্নিকান্ড রোধ কিংবা
অগ্নি নিরাপত্তা
অগ্নিকান্ডের জন্য সাধারনত ঃ কারখানা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত নীতিগুলি গ্রহন করবে ঃ
বর্হিগমন দরজাঃ
জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য বর্হিগমন দরজা প্রস্থে ৩র্২র্ এবং উচচতায় ৭র্৮র্ হবে। প্রতিটি দরজা এমন ভাবে তৈরী করতে হবে যাহা বাইরে থেকে খোলা যায়। প্রতিটি দরজায় ইংরাজী ও স্থানীয় ভাষায় লাল অক্ষরে “বর্হিগমন” কথাটি লেখা থাকবে। কাজ করার সময় কারখানার সকল ফ্লোরের দরজা/ বর্হিগমন পথ খোলা থাকবে। লাল ও হলুদ রং দ্বারা প্রত্যেকটি দরজা/ বর্হিগমন পথ জেব্রা ক্রসিং দেয়া থাকবে।
জরুরী নির্গমন বাতি ঃ
সকল দরজা/ বর্হিগমন পথে, ফ্লোর ও সিড়িতে ব্যাটারী চালিত জরুরী বাতি থাকবে। জরুরী প্রয়োজনে বের হবার জন্য ফ্লোরে হলুদ চিহ্নিত চলাচলের পথ থাকবে, যাতে বহির্গমন নির্দেশিত লাল রঙের তীর চিহ্ন দেয়া থাকবে। সকল চলাচলের পথ পরিস্কার থাকবে ও কোন বাধা থাকবে না। প্রতিটি সিড়ির সাথে মজবুত হ্যান্ডরেইল থাকবে, যাতে কেউ পড়ে না যায়।
হুশিয়ারী সংকেত/ গং বেল/ পি.এ. সিস্টেম ঃ
আগুন লাগলে শ্রমিকদের সতর্ক করার জন্য ফ্লোরে ব্যাটারী চালিত হুশিয়ারী সংকেত ও হস্তচালিত গং বেল থাকবে। হুশিয়ারী সংকেত ও গং বেল কথাটি শ্রমিকের বোধগম্য ভাষায় লাল কালিতে লেখা থাকবে। জরুরী প্রয়োজনের মুহুর্তে সকলকে নির্দেশ দেয়ার জন্য প্রত্যেক ফ্লোরে ব্যাটারী চালিত পি.এ. সিস্টেম থাকবে।
ফায়ার বালতি ঃ
প্রতি ১০০০ বর্গফুট মেঝে এলাকার জন্য লাল রং করা পানি ভর্তি ২টি করে বালতি থাকবে।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ঃ
প্রতি ১০০০ বর্গফুটের জন্য ১টি করে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকবে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রসমূহ প্রতিটি ৫Ñ৬ কেজি ওজন সম্পন্ন কার্বন Ñডাই- অক্সাইড এবং এবিসি পাউডারের হতে হবে। লাল ও হলুদ জেব্রা মার্কিং দ্বারা প্রত্যেক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নির্দেশ করবে। প্রতিটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের উপর “অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র” কথাটি লেখা থাকবে এবং ব্যবহারবিধি থাকবে। অগ্নি নির্বাপক প্রত্যেক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের জন্য ১টা রক্ষনাবেক্ষন কার্ড থাকবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে কিনা ও ব্যবহারের উপযুক্ত কিনা সেটা একজন দায়িত্বশীল লোক প্রতি মাসে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবে।
অগ্নি মহড়া ঃ
অগ্নি দূর্ঘটনার সময় নিরাপদ নির্গমনের জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য প্রতি মাসে অগ্নি মহড়া দিতে হবে। মহড়া, মহড়ার সময় এবং দূর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে রেকর্ড রাখতে হবে। মহড়াটি এমন ভাবে হবে যেন এটা দ্বারা প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়।
ফায়ার হোস ঃ
প্রত্যেক ফ্লোরে সংরক্ষিত জলাধারের সাথে ফায়ার হোস সংযুক্ত থাকবে এবং পাইপটির দৈর্ঘ্য ফ্লোরের ৯০% এলাকাজুড়ে হবে। বৎসরে ২ বার হোস পাইপের কার্যকারীতা পরীক্ষা করতে হবে।
অগ্নি নিরোধক যন্ত্রপাতি ঃ
কারখানার প্রত্যেক ফ্লোরে নিম্নলিখিত সরঞ্জামাদি থাকবে ঃ ক) হুক (ধাতব) খ) বিটার (ধাতব) গ) স্ট্রেচার (২ টি)
ঘ) ব্লাংকেট (২ টি) ঙ) গ্যাস মাস্ক (৫ টি) চ) লক কাটা
অগ্নি নির্ব াপনের জন্য এবং আগুনের ক্ষেত্রে করনীয় বিষয় সমুহ ঃ
অগ্নি প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল বিভাগ থেকে সদস্য নিয়ে একটি ফায়ার কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির সকল সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দেশ করতে হবে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সনাক্ত করার জন্য ”আর্ম ব্যান্ড” দিতে হবে এবং সম্ভব হলে তাদের এ্যাপ্রোন/ জ্যাকেট দিতে হবে। প্রতি মাসে অগ্নি মহড়ার পর সাব-কমিটির সদস্যরা একবার মিলিত হবে এবং রেকর্ড সংরক্ষন করবে।
- বিচলিত হয়ে উপস্থিত বুদ্ধি হারাবেন না, নিজেকে ধীর-স্থির রাখুন।
- হাতের কাছে যেটুকু পানি পাওয়া যায় সুচনাতেই অগ্নিল, বস্তা দিয়ে আগুন চাপা দিন।
- তৈল জাতীয় আগুনে পানি না দিয়ে বালু, ভিজা মোটা কাপড় বা ভিজা কম্বল বা ফোম জাতীয় রাসয়সিক পদার্থ ব্যবহার করুন।
- আগুন যাতে বিস্তৃত হতে না পারে সেজন্য আশেপাশের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন।
- বৈদ্যুতিক আগুন লাগলে দ্রুত মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
- পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে গড়াগড়ি দিন বা ভিজা মোটা কম্বল দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নিন। কখনো দৌড়াবেন না। তাহলে আগুন বেড়ে যাবে।