আগুন নিভানোর শর্ত সমূহ
আগুন নিভানোর শর্ত সমূহঃ বিদ্যুৎ, কেমিক্যাল এবং তেলের আগুন নির্বাপনে কোন ক্রমেই পানি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই নির্বাপনকারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন। কেমিক্যলের আগুনে পানি দিলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তেল পানির চেয়ে হাল্কা। তাই তেলের আগুনে পানি দিলে আগুন না নিভে বরং ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সকল আগুন নির্বাপনের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সিওটু, ফোম, ব্্েরামাইড ইত্যাদি। আমরা আগেই জেনেছি যে, আমরা শুধুমাত্র আগুনের প্রাথমিক অবস্থায়ই উহা নির্বাপনের চেষ্টা করব। আগুন নির্বাপনের কৌশল জানা না থাকলে এবং আগুনের বৈশিষ্ট্য জানা না থাকলে নির্বাপনকারী নিজেই দূর্ঘটনায় পতিত হতে পারেন। সুতরাং আগুন নির্বাপনের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে হবে – …
- স্বাস্থ্যকর খাবার পানি সরবরাহ, বাতাস প্রবাহ ব্যবস্থা এবং কারখানার অভ্যন্তরের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।আগুন ছোট এবং খুব দ্রুত বিস্তার করছে না। মনে রাখতে হবে আগুন প্রতি ২/৩ মিনিটে দ্বিগুন বা তিনগুন হতে পারে।
- আপনি যে আগুন নির্বাপন করবেন তার জন্য প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র আছে। ভুল অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বা মাধ্যম আপনার বিপদের কারণ হতে পারে।
- আগুন যেন আপনার বের হবার পথ বন্ধ না করে দেয়, অর্থাৎ আগুন নেভানোর সময় বের হবার পথ নিশ্চিত থাকতে হবে।
- অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বা মাধ্যম কার্যকরী থাকতে হবে। এ জন্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এবং অন্যান্য অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থাসমূহ নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে।
- আগে থেকেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার জানতে হবে। কারণ যখন আগুন লাগে তখন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের নির্দেশনা পড়ার সময় পাওয়া যাবে না। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সব সময় আগুনের ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হবে।
- শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন।যে কোন ধরণের আগুন জ্বললেই কিছু কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। উল, সিল্ক, নাইলন এবং কিছু প্লাষ্টিক এর আগুনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। সুতরাং এ সকল আগুন নিভানোর সময় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে এবং উপযুক্ত মাস্ক এবং ব্রিদিং এ্যাপারেটাস পড়ে নিতে হবে।
আগুন লাগলে করনীয়ঃ
ক)আগুন লেগেছে নিশ্চিত হয়ে অগ্নি ঘন্টা বাজাতে হবে (যদি সম্ভব হয় প্রাথমিক ভাবে নিজেই আগুন নিভাতে হবে)। খ)ফায়ার ফাইটারদের খবর দিতে হবে। গ)জরুরী বিভাগকে খবর দিতে হবে। যেমন-ফায়ার ব্রিগেট,বিদ্যু অফিস ,গ্যাস অফিস, থানা এবং হাসপাতাল। ঘ)সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে সবাইকে আগুন সম্পর্কে অবগত করতে হবে। ঙ)অগ্নি কান্ডের অবস্থান বুঝে ফ্যাক্টরী থেকে সমস্ত লোক নিরাপদে সরিয়ে নিতে হবে।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের নামের তালিকা।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এ,বি,সি পাউডার। কার্বন ডাই অক্সাইড-গ্যাস ওয়াটার হোজ স্মোক ডিটেক্টর ফায়ার ব্লাঙ্কেট গ্যাস মাস্ক স্যান্ড বাকেট ফায়ার রোপ ফায়ার বিটার লক কাটার ফায়ার হুক হাত মোজা অগ্নি ঘন্টা
পরিদর্শন ও রক্ষনাবেক্ষণ ঃ
পরিদর্শন ঃ অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রটি কাজের উপযোগি আছে কি না তা জানার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার যন্ত্রটি পরিদর্শন করবেন। বিশেষকরে ডেলিভারী হোজপাইপ কোথাও ছিদ্র আছে কিনা বা মরিচা ধরেছে কি না ইত্যাদি পরিদর্শন করে পরিদর্শনকার্ডে স্বাক্ষর করতে হবে এবং পরিদর্শনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
রক্ষণাবেক্ষণ ঃ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রটি যাতে দূর্ঘটনার সময় সহজে ব্যবহার করা যায় সেজন্য দর্শনীয় জায়গায় বাঁধামুক্ত অবস্থায় (কোন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না) রাখুন। যে কেহ যাতে যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারে সে জন্য অতি উচ্চতায় না ঝুলিয়ে হাতের কনুই বরাবর উচ্চতায় (ফ্লোর থেকে ৪৮ ইঞ্চি ) ঝুলাতে হবে। যেহেতু এটি বিদ্যুৎ এবং তেলের আগুনের জন্য বেশী কার্যকরী সেহেতু বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বোর্য, ডিষ্ট্রিবিউশন বোর্ড, জাংশন বোর্ড, জেনারেটর রূম ইত্যাদিও কাছে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যেহেতু সিওটু একটি গ্যাস সুতরাং নতুন ক্রয়ের পর ব্যবহার না করলে ৫-১০ বছরের মধ্যে রিফিল করানোর প্রয়োজন হয় না। তবে যন্ত্রটি বছওে অন্ততঃ একবার ওজন দিতে হয়। যদি দেখা যায় যন্ত্রটির মোট ওজনের ১০% গজন কমে গিয়েছে তবে যে কোন সময় রিফিল করা প্রয়োজন। ।
রিফিল করানোর নিয়ম ঃ প্রথমে লিভারে চাপ দিয়ে (সকল গ্যাস বের করে) অগ্নি যন্ত্রটি খালি করে ফেলুন। এবার খালি অবস্থায় যন্ত্রটির ওজন নিন। ধরা যাক এর ওজন ১৫ কেজি। এবার ৫ কেজি গ্যাস পূর্ণ করলে এর ওজন হবে ২০ কেজি। এভাবে যদি কয়েকটি যন্ত্র রিফিল করানো হয়, তাহলে গ্যাস সঠিক দিয়েছে কি না তা জানার জন্য আগুন জ্বালিয়ে যে কোন একটি যন্ত্র ব্যবহার করলে যদি আগুন নিভে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সঠিক মানের গ্যাস দেয়া হয়েছে।