শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সমুহ
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় উৎপাদন এবং দারিদ্রের হার যখন সমান্তরালে বেড়ে চলেছে ঠিক তখনই বিশ্ব অর্থনীতিতে আর একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন এ অর্থনীতির নাম মুক্ত বাজার অর্থনীতি । মুক্ত বাজার অর্থনীতি হলো যোগ্যতমের অস্তিত্বরক্ষা। এই বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কি হওয়া উচিত তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। প্রতিনিয়তই একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান চিন্তা করে কি করে কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়। কিন্তু প্রতিযোগিতা মুলক বাজারে তা কি সম্ভব ? শিল্প উদ্যক্তাদের উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। মুনাফা না হলে করতে রাজি হতো না ।যে সমস্ত অধিকার শ্রমিকদের মৌলিক অধইকারের মধ্যে পরে তা নিম্নে আলোচনা করা হল।
- নিম্নতম বেতন মজুরী পাওয়া।
- মজুরীসহ অবকাশ ও অন্যান্য ছুটি ভোগের স্বাধীনতা।
- শ্রমিকদের দৈনিক কর্মঘন্টা এবং অতিরিক্ত কার্যঘন্টার পূর্ণ স্বাধীনতা।
- বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা।
- স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপত্তা পূর্ণ পরিবেশ।
- জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমান সুবিধা পাওয়া।
- প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিয়োগ, ছাঁটাই, পদোন্নতি ,কর্মচ্যুতি, বরখাস্ত, এবং শাস্তি প্রদান।
- বিনামূল্যে আত্মরক্ষা মূলক সরঞ্জামাদি, বিনোদন মূলক ও কল্যানকর বিধি ব্যবস্থা এবং কল্যাণ মূলক বিধি।
- কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের সম্পুর্ণ অপক্ষপাতিত্ব মূলক হয়রানী ও যৌন উৎপীড়ন মুক্ত কর্মপরিবেশ।
- দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্র¯হ শ্রমিকের ইন্স্যুরেন্স বা ক্ষতি পূরণ পাওয়ার অধিকার।
- মাতৃকালীন সুবিধা ও প্রসূতি ভাতা পাওয়ার অধিকার।
- পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির অধিকার ।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও শিক্ষাব্যাবস্থা
কারণ ব্যবসায়ীক উদ্দোগ এর মধ্যে আছে অনিশ্চয়তা। আর বাংলাদেশের বেলায় এই ঝুকি আরও অনেক বেশি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শিল্পায়ণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও সরকার পরিবর্তন, শিল্প নীতির পরিবর্তন, দলীয় ট্রেড ইউনিয়ন, বন্দর, পরিবহণ ও যোগাযোগ এর অব্যাবস্থাপনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মত বিষয় গুলো তো রয়েছেই । তাই শিল্প উদ্যোক্তা যে মুলধন বিনিয়োগ করতে চায় সেই মুলধন ব্যাংকে রেখে বা অন্য কোন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করছে। কিন্তু এতসবের পরেও কোন কোন উদ্দোক্তা বিনিয়োগ করেন । বিনিয়োগ মানেই অধিক মুনাফা অর্জনের নিশ্চয়তা নয়, এর জন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি এবং উপযুক্ত নীতিমালা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ক্লার্ক তার গ্রন্থে বলেছেন-
একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিদিষ্ট পরিমান মূলধন নিয়ে ঊৎপাদন কাজে অগ্রসর হয়। সেই মূলধন এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে তার মুনাফা হয় সর্বাধিক। মুনাফা সর্বাধিক করার উদ্দেশ্যে নিদিষ্ট মূলধনের সংগে সংগতি রেখে শ্রমিক নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
পোষাক শিল্প এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে পোষাক শিল্পো অনেক আগে শুরু হলেও আমাদের দেশে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালে এবং রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই শিল্পের ভূমিকা অনেক বেশি। ১৯৮০-১৯৮১ সালে দেশের মোট রপ্তানি আয় এর ০.৪৬% ছিল পোষাক শিল্পের মাধ্যমে ১৯৯০-১৯৯১ সালে ছিল ৪০% এর মাত্র দশ বছর ব্যবধানে ২০০১-২০০২ সালে ছিল ৭৫% আর বর্তমানে ৭৬% রপ্তানি আয় হয় পোষাক শিল্প থেকে। বর্তমানে দেশে ৪৫ হাজার এর উপরে পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যার মধ্যে প্রায় ২২ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত । এতো বড় সম্ভবনাময় খাত আমাদের আর দ্বিতীয়টি নেই।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা যখন দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তখন পোষাক শিল্পের মাধ্যমে এই বিপুল জনসংখ্যা দেশের জন্য অভিশাপ নয় বরং তা আর্শীবাদে পরিনত হয়েছে। এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিনত করতে পারলে দেশ উন্নতির চরম শিখরে পেীছাতে সক্ষম হবে । পৃথিবীতে এরকম দৃষ্টান্ত বিরল নয়। যেখানে বিপুল পরিমান লোক পোশাক শিল্পে কাজ করে সেখানে হাতেগনা দুই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এক মাত্র পোষাক শিল্পের উপর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানেও সমাজের বৃক্তবান শ্রেণীই শুধু পড়ার সুযোগ পায়। দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পোষাক শিল্পের উপর পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে তৈরী হতো দক্ষ লোক। একদিকে যেমন তৈরী হতো দক্ষলোক আর অন্য দিকে এই শিল্পের প্রধান উপাদান কিভাবে ব্যবহার করলে খরচ কম হয় এবং উৎপাদনের পরিমান বেশি হয় তার জন্য নীতি মালা। ব্যবিলন গ্র“প আজ ছোট পরিসরে শুরু করেছে । দেশের সরকার প্রধান যদি দক্ষ লোক তৈরীর কাজে হাত দিতো তবে এই সম্ভবনাময় খাত আরো শক্তিশালী হতো ।