দূর্ঘটনা ও নিরাপত্তা নীতি
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: মানব সভ্যতার উন্নতি এবং অগ্রগতিতে আগুনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যেমন অপরিসীম ঠিক তেমনি সভ্যতাকে ধ্বংশ করে, সম্পদ বিনষ্ট করে এমনকি মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়ে যুগে যুগে এই আগুনই পালন করে চলেছে তার ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড। কারখানা এলাকায় অগ্নিকান্ড সমুদয় ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে পারে। এর কারণে গুরুতর আহত হবার এমনকি মৃত্যূর ঘটনাও ঘটতে পারে। তারপরও যে কোনো মূল্যে মানসম্মত ও উন্নত ডিজাইন ও উপকরণ ব্যবহার করে কারখানায় অগ্নি দূর্ঘটনার ঝুকি শুন্য পর্যায়ে নিতে হবে। তাই অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বদায় অগ্রাধিকার দিয়ে অগ্নি দূর্ঘটনায় অত্র কারখানায় কর্মরত সকল শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোম্পানীতে অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণোয়ণ করা হয়েছে। কারখানার সকল কর্মীদের একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করার জন্য প্রচলিত আইনানুযায়ী কারখানায় নিুোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে । …
“ অটো সুয়েটার্স লিঃ ” কারখানার জন্য একটি সু-পরিকল্পিত বাস্তবতা সম্পন্ন নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করা। আর সে লক্ষে কর্র্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে আলোকপাত করা হলো ঃ
ক) কারখানার প্রতিটি শ্রমিকের আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
খ) অনাকাঙ্খিত বৈদ্যুতিক ও অগ্নি দূর্ঘটনার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত অনুশীলন করা।
গ) কারখানায় ভালোভাবে কাজ করার একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা।
ঘ) কারখানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা।
ঙ) কারখানার প্রতিটি ষ্টাফ ও শ্রমিককে সচেতন করে তোলা।
চ) সম্পদের সুরক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা।
ভুমিকা ঃ বাংলাদেশের শ্রমনিবিড় শিল্পগুলোর মধ্যে রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্প অন্যতম। গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ১০০% রপ্তানী মুখী শিল্প। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ শিল্পে দেশের অনেক শ্রমিক সরাসরি সম্পৃক্ত। সম্প্রতি কিছু গার্মেন্টস শিল্পে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের ফলে দুর্ঘটনা দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। এ কারনে অগ্নিকান্ড এবং তা থেকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ একান্ত জরুরী। গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সদা সচেষ্ঠ এই বিপুল শ্রম শক্তির সার্বিক কল্যাণে,কর্মক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা বিধানে সকলের সু-দৃষ্টি,সম্মিলিত উদ্যেগ ও সচেতনতা অত্যাবশ্যক। অটো সুয়েটার্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কারখানার কর্মী ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা নিশ্চত করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রনয়ণ করা জরুরী। প্রতিটি কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সুন্দর ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে “অটো সুযেটার্স লিমিটেড” কর্র্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে। আর সেই লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠ ও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার কোন বিকল্প নেই।
অগ্নি নিরাপত্তা ঃ
ভবন ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা ঃ অগ্নিকান্ড থেকে নিরাপত্তার জন্য একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা আছে যা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে। কারখানা ভবনটি এমন স্থানে এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এবং যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তা মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বা ঝুকিপূর্ণ নয় ।
অগ্নিকান্ড সম্পর্কে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা ঃ
- কারখানাটি দুইটি বিকল্প সিঁড়ি সহ বহির্গমনের নিরাপদ ব্যবস্থা রয়েছে ।
- আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার এ্যালার্ম এবং গং বেল বাজাতে হবে।
- বহিঃগমন পথ ও লেনগুলি লাল রং দিয়ে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
- কারখানা কক্ষের সকল দরজা সমূহ স্লাইডিং টাইপের / বাইরের দিকে খোলা যায় এমন ভাবে তৈরী হয়েছে ।
- পর্যাপ্ত পরিমানে অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা এবং আইনানুযায়ী অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে ।
- ফ্যাক্টরীর কাজ চলাকালীন কোন অবস্থাতেই ফ্যাক্টরীর নির্গমণ পথ বন্ধ রাখা যাবে না।
- স্পষ্টভাবে শ্রবনযোগ্য হুশিয়ারী সংকেতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।
- জরুরী বহির্গমন পথটি লাল কালিতে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করণ করা হয়েছে ।
- ফ্যাক্টরীর আয়তন অনুযায়ী প্রতি ৫০০ (পাচঁশত) বর্গফুটের জন্য একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকবে যেগুলো প্রতি মাসে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং ফ্যাক্টরীর লক্ষ্যনীয় জায়গায় টানানো থাকবে।
- কারখানাটিতে নিয়মিত অগ্নি মহড়ার ব্যবস্থা আছে । প্রতিমাসে ১/২ বার এই মহড়ার আয়োজন করা হয় ।
- কারখানাটিতে অগ্নি নিরাপত্তামূলক নকশা স্থাপন করা হয়েছে ।
- মাসে অন্ততঃ একবার অগ্নি প্রতিরোধের অনুশীলনের মাধ্যমে শ্রমিকদেরকে এই অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
- অগ্নি দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে শ্রমিকদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে । এর অংশ হিসাবে শ্রমিকদের কর্ম পোশাক (স্কার্ফ, এপ্রোন ইত্যাদি) পরিধানে উৎসাহিত করন এবং খোলা চুল ও ঢিলেঢালা পোশাক বর্জনের পরামর্শ দেয়া হয় ।
- অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জামাদির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন স্থায়ী ‘ফায়ার অফিসার’ রাখা হয়েছে ।
- জরুরী বহিঃগমন পরিকল্পনা লিখিত ও স্কেচের মাধ্যমে উল্লেখ যোগ্য জায়গায় টানাতে হবে এবং সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ঃ
- কারখানাটিতে ব্যবহৃত সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিক ভাবে আবৃত করে রাখা হয়েছে ।
- ফ্যাক্টরীতে পর্যাপ্ত আলোর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাক ঊসবৎমবহপু খরমযঃ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির সঠিক ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ জন স্থায়ী ইলেক্ট্রশিয়ান / বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি রাখা হয়েছে ।
- মেইন সুইচ বোর্ডগুলি যথাযথ ভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো সব সময় অপপবংংরনষব (সুগম) রাখতে হবে যেন প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে কেউ বাধা প্রাপ্ত না হয়।
- মেশিন নিরাপত্তা ঃ
- স্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ নিরাপদভাবে করতে হবে।
- কোথা ও কোন খোলা তার, ইনসুলিশন টেপযুক্ত তার থাকবে না।
- কোথা ও কোন বাতি ফিউজ হলে তা সাথে সাথে বদলাতে হবে যেন আলোর স্বল্পতা না হয়।
- ফ্যাক্টরীতে অবস্থিত সুন্দর ও পরিপাটি করে রাখতে হবে।
- সকল স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ষ্টোরের র্যাক যেন বেশী উঁচুতে না হয়।
- ষ্টোরে বৈদ্যুতিক তার সংযুক্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে না।
- সকল স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার হোজ পাইপ, ড্রাম ভর্তি পানি,বালতি ও বালু ভর্তি বালতির ব্যবস্থা রাখতে হ
- অপেক্ষাকৃত বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি সমূহ যেমন বয়লার মেশিন, থ্রেড সাকার মেশিন আলাদা স্থাানে ঘিরে রাখার ব্যবস্থা আছে ।
- জেনারেটর রুমটি কারখানা কক্ষ থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে রাখা হয়েছে এবং জেনারেটরের মেশিন ম্যানের জন্য শব্দ নিয়ন্ত্রণ এয়ার প্লাগ সরবরাহ করা হয়েছে ।
- কর্মস্থলের সকল ফ্লোর, চলাচলের পথ, সিঁড়ি ইত্যাদি সার্বক্ষণিক ভাবে বাধা মূক্তভাবে প্রস্তুত করে নির্মাণ করা হয়েছে ।
- মেশিনের সাথে সংযুক্ত তার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক তার এমন ভাবে বিন্যন্ত করতে হবে যেন অপারেটরদের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্থ না হয়।
- কাটিং মেশিনের কাটিং ম্যানের জন্য মেটাল হ্যান্ড গ্লোভস বা ধাতব হাত মোজা সরবরাহ করা হয়েছে ।
- সকল মেশিন গুলোর মেশিন গার্ড সমূহ নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হয় ।
- মেইন সুইচ বোর্ডের উল্লেখ যোগ্য সুইচগুলোর “ঙঘ” এবং “ঙঋঋ” এর উরৎবপঃরড়হ মার্কিং করে রাখতে হবে।
- সকল শ্রমিকদের বিনা মূল্যে আতœরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি (আই গার্ড, চশমা, ডাষ্ট মাস্ক, গ্যাস মাস্ক ইত্যাদি) সরবরাহ করা হয়েছে ।
- সমস্ত এ্যালার্ম সিস্টেম যথাযথ ভাবে নিশ্চিত করতে হবে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেয়া অবস্থায় এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- শ্রমিকদেরকে আতœরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে ।
নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করন/ যোগাযোগ ঃ
আকস্মিক অগ্নি দূর্ঘটনা যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে। তাই এই পলিসি সম্পর্কে কারখানার সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্যক ঞ্জান থাকা আবশ্যক। এই পলিসি কারখানার সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীকে জানানোর মাধ্যমগুলো হচ্ছে- কারখানার সাউন্ড সিস্টেম, শ্রমিক প্রতিনিধি, নোটিশ বোর্ড, মিটিং ও ট্রেনিং ।
এছাড়াও দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ও এইচ আর এন্ড কমপ্লাইন্স অফিসারগনের মাধ্যমে অবহিত করা হয় এবং এই নীতিমালার যাবতীয় কার্যক্রম নথিভূক্ত করা হয়।
ফিডব্যাক ও কন্ট্রোল ঃ
এই পলিসি কারখানায় বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ সর্বদা সচেতন এবং সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহন করে। এর পরও যদি পলিসি বাস্তবায়ন না হয় বা বাস্তবায়নের পথে কোন বাধাঁর সস্মুখীন হয়, তবে সদা নিয়ন্ত্রন করার জন্য কার্যকরী পরিষদ ও নির্বাহী পরিচালক ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন। এমনকি মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ঠ ঃ
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পোশাক শিল্পের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের পোষাক শিল্পের নাম ইতিমধ্যেই বহিঃ বিশ্বে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে। তাই এই শিল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের এই গতিকে ত্বরান্বিত করতে হলে, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই দৃষ্টিপাত করতে হবে এর প্রাণ শক্তির দিকে। আর তা হলো এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী। একটি সুন্দর পরিবেশ, জান-মালের নিরাপত্তা প্রতিটি শ্রমিক-কর্মচারীকে নিজ কর্মে আরো অনুপ্রাণিত করবে, বাড়বে উৎপাদন।গ্র“পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগনকে কর্মস্থলে সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোম্পানী ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।আর এই দায়িত্ব সঠিক বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।