আগুন নির্বাপনের মাধ্যম
আগুন কোন আতঙ্কিত বস্তু নয়, অথবা দুর্দমনীয় কোন দানব নয় যে একে দমন বা নিয়ন্ত্রন করা যাবে না। উৎপত্তি স্থল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে আগুনের অনেক সময় লাগে। আর এ সময়ের মধ্যে আগুনকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন আগুন নিয়ন্ত্রনের কৌশল জানা। কৌশল জানতে প্রয়োজন অগ্নি নির্বাপণ প্রশিক্ষণ। এরই ধারাবাহিকতায় আল- মুসলিম গ্র“পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগনকে কর্মস্থলে সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোম্পানী ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।আর এই দায়িত্ব সঠিক বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।সকল দাহ্যের আকার আয়তন এবং আগুনে পোড়ানোর পর কয়লার সৃষ্টি হয়। যেমন-বাঁশ,কাঠ,তুলা,কাপড় এক কথায় বলা যায় সলিড এবং বুনন শিল্পে যা কিছু ব্যবহার করা হয়। …
আগুনের শ্রেনী বিন্যাস ও নির্বাপন মাধ্যম
পৃথিবীর সকল সাধারন আগুনকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাপনের জন্য দাহ্য বস্তুর প্রকার ভেদে ৪টি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ক, খ, গ, ও ঘ শ্রেনীর আগুন। তবে যে সকল আগুনকে শ্রেনীভূক্ত করা যায় না সেই সকল আগুনকে বিশেষ আগুন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন- বৈদ্যুতিক আগুন, কেমিক্যাল, রেডিও একটিভ ইত্যাদি।
“ক” শ্রেনীর আগুন ঃ কঠিন দাহ্য বস্তু হচ্ছে “ক” শ্রেনীর আওতাভূক্ত। অর্থাৎ যার আকার, আয়তন ও ওজন আছে। যেমন- কাঠ, পাট, তুলা, কাপড়, কাগজ, বাঁশ ইত্যাদি।
নির্বাপন মাধ্যমঃ “ক” শ্রেনীর আগুন সবচেয়ে ভাল নির্বাপন মাধ্যম হচ্ছে পানি। এছাড়াও সোডা এসিড এক্সটিংগুইসার, ওয়াটার টাইপ এক্সটিংগুইসার, কার্বনড্রাই অক্সাইড এক্সটিংগুইসার, ডিসিপি এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা যায়।
“খ” শ্রেনীর আগুনঃ “খ” শ্রেনীর আওতাভূক্ত হচ্ছে তরল জাতীয় দ্রব্য। তরল দাহ্য বস্তু হচ্ছে যার আয়তন ও ওজন আছে কিন্তু আকার নেই। সাধারন ভাবে বলা যায় হাইড্রোকার্বন বা তেল।
নির্বাপন মাধ্যমঃ “খ” শ্রেনীর আগুনের সবচেয়ে নিরাপদ নির্বাপন মাধ্যম হচ্ছে ফোম বা প্রজ্জলিত তরল পদার্থের উপর আবরন সৃষ্টি করে অক্সিজেন বা বাতাস সীমিত করে আগুন নির্বাপন করে। তেলের আগুনে কেমিক্যাল ফোম, এয়ার ফোম, অক্সিজেন, ডিসিপি ব্যবহার করা যায়।
“গ” শ্রেনীর আগুনঃ “গ” শ্রেনীর পর্যায়ভূক্ত দাহ্যবস্তু হচ্ছে গ্যাস, গ্যাস হচ্ছে যার ওজন আছে কিন্তু আকার ও আয়তন নেই।
নির্বাপন মাধ্যমঃ অক্সিজেন বা ডিসিপি
“ঘ” শ্রেনীর আগুনঃ “ঘ” শ্রেনীর আগুনের দাহ্য বস্তু হচ্ছে ধাতু।
নির্বাপন পদ্ধতিঃ সাধারন অগ্নি নির্বাপন মাধ্যম দ্বারা এই শ্রেনীর আগুন নির্বাপন করা যায় না, সুতরাং এ প্রকার আগুন নির্বাপন করতে বিশেষ ধরনের ড্রাই পাউডার ব্যবহার করতে হয়। যেমন- ঞঊঈ, ঞঊঋ, বালি, ছাই ইত্যাদি।
ফায়ার হুক, ফায়ার বিটার বা অন্য কোন উপায়ে।
পানি (বালতি, ড্রাম, হোজরীল, ¯িপ্রংকলার, হাইড্রেন্ট) ব্যবহার করা (সর্বোত্তম মাধ্যম)।
ভারি জিনিস (মোটা কাপড়, কম্বল, কাঠ ইত্যাদি) দিয়ে চাপা দেয়া এবং সিওটু অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা।
ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার বা ডিসিপি (এবিসি টাইপ) ব্যবহার করা
ফোম টাইপ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (সর্বোত্তম মাধ্যম)
ও সিওটু (আগুন ছোট হলে) অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা।
ডিসিপি (এবিসি টাইপ) ব্যবহার করা (আগুন ছোট হলে)।
গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করা (গ্যাসের লাইনের চাবি বা রাইজার বন্ধ করা) (সর্বোত্তম মাধ্যম)
সিওটু অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা (আগুন ছোট হলে)
ডিসিপি (এবিসি টাইপ) ব্যবহার করা
ডি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার
বিশেষ ধরণের ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার
টারনারী ইউটেকটিক ক্লোরাইড বা ফ্লোরাইড (টিইসি/টিইএফ পাউডার) যা সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড এবং বেরিয়াম ক্লোরাইড বা ফ্লোরাইড এর মিশ্রনে তৈরী করা হয়।
ড্রাই স্যান্ড বা শুকনা বালু, গ্রাফাইট গুড়া, ছাই ইত্যাদি
কারখানা এলাকায় অগ্নিকান্ড সমুদয় ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে পারে। এর কারণে গুরুতর আহত হবার এমনকি মৃত্যূর ঘটনাও ঘটতে পারে। তারপরও যে কোনো মূল্যে মানসম্মত ও উন্নত ডিজাইন ও উপকরণ ব্যবহার করে কারখানায় অগ্নি দূর্ঘটনার ঝুকি শুন্য পর্যায়ে নিতে হবে। তাই অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে অগ্নি দূর্ঘটনায় যাতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি না হয় সেজন্য অগ্নি দুর্ঘটনায় আমাদের কি করনীয় এব্যাপাওে সকলকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার সানসেই এ নীতিমালা প্রনীত।সঠিক ও গুনগত মানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা, কোন প্রকার লুজ ওয়্যারিং না রাখা, ওয়্যারংি কনসিলড বা কনডুইট করা, ভাঙ্গা প্লাগ, সকেট, কাটাউট ইত্যাদি পরিবর্তন করা, অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান বা ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ওয়্যারিং করানো, বৈদ্যুতিক চ্যানেলগুলো নয়মিত পরিস্কার করা ইত্যাদি। প্র্রতিটি লাইনের জন্য অটোমেটিক সার্কিট ব্রেকার বসানো, অটোমেটিক মেইন সুইচ, অটোমেটিক ভোল্টেজ ষ্টাবিলাইজার বসানো, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সকল ওয়্যারিং পরিবর্তন করা এবং সকল বৈদ্যুতিক স্থাপনা নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য কারখানায় সার্বক্ষণিকভাবে একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান (সার্টিফিকেটধারী) নিয়োগ দেয়া।
সেলাই মেশিনের মটর নিয়মিত পরিস্কার করণ ও তেল-মবিল দেয়া, মেশিনের সাথে উপযুক্ত আর্থিং সংযোগ দেয়া, বৈদ্যুতিক তারের কানেকশন লুজ না থাকা ইত্যাদি।
মানব সভ্যতার উন্নতি এবং অগ্রগতিতে আগুনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা যেমন অপরিসীম ঠিক তেমনি সভ্যতাকে ধ্বংশ করে, সম্পদ বিনষ্ট করে এমনকি মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়ে যুগে যুগে এই আগুনই পালন করে চলেছে তার ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড।বৈদ্যুতিক জেনারেটর অবিরাম না চালিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বন্ধ রাখা, জেনারেটর কক্ষে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, দক্ষ অপারেটর থাকা ইত্যাদি।
কারখানায়া সঠিক মানের বয়লার ব্যবহার করা। বয়লার কক্ষে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, বয়লার পরিচালনার জন্য দক্ষ অপারেটর (সার্টিফিকেটধারী) নিয়োগ দেয়া এবং নিয়মিত পরিদর্শন করা। বয়লার কারখানা ভবনের বাইরে স্থাপন করা।
কারখানার অভ্যন্তরে ধুমপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। সিগারেট ধরানোর পরে ম্যাচের কাঠি এবং ধুমপান শেষে অবশিষ্টাংশ ভালভাবে নিভিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
কারখানার অভ্যন্তরে কোন প্রকার রান্না-বান্না না করা বা অন্য কোন কাজে আগুন না জ্বালানো।
কারখানার অভ্যন্তরে কোন প্রকার ওয়েল্ডিং এর কাজ না করা। বিশেষ কারণে ওয়েল্ডিং করার প্রয়োজন হলে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়ে নিতে হবে।
কাপড় আয়রন করার পর বা বিদ্যুৎ চলে গেলে আয়রন বন্ধ করে নির্দ্ধারিত জায়গায় রাখতে হবে। থিনার ব্যবহারের জন্য আলাদা কক্ষ থাকতে হবে। উক্ত কক্ষে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। থিনার ব্যবহারকারীকে অবশ্যই গ্লোভস এবং মুখোস ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করার পূর্বে থিনারের ¯েপ্র মেশিনটি ভালভাবে চেক করে নিতে হবে।
এ আগুনে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এবং কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সুতরাং মন মানসিকতা পরিবর্তনই এ আগুন বন্ধের উপায়।
এ আগুন শত্র“ দ্বারা সংঘটিত হয়। সুতরাং শত্র“ থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
কারখানার ভিতর কিছুতেই কেমিক্যাল সংরক্ষণ করা যাবে না। সম্পূর্ণ আলাদা কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নিয়মানুসারে কেমিক্যাল সংরক্ষণ করতে হবে।
কাপড়ের গুদামে কাপড় সমূহ নির্দিষ্ট নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে, যেমন ছাদ থেকে কমপক্ষে এক ফুট নীচে, দেয়াল থেকে এক ফুট দুরে, ফ্লোরে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি পাটাতন তৈরী করে এবং প্রতিটি সারির মাঝখানে কমপক্ষে ৩ ফুট ফাকা রেখে কাপড় সংরক্ষণ করা। বন্ডেড ওয়্যার হাউজের মধ্যে কোন ক্রমেই বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ রাখা যাবে না। প্রয়োজনে চার্জার, আইপিএস ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
আগুন প্রতিরোধের জন্য পোশাক শিল্প কারখানা কমপক্ষে ৩/৪ ঘন্টা আগুন প্রতিরোধে সক্ষম দ্রব্য দিয়ে পাকা করে তৈরী করতে হবে এবং কারখানার মেঝে, সিঁিড় ও সান সাইড সব সময় পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।