Select Page

নির্গমন পরিকল্পনা ও নির্গমন নীতি

আগুন লাগলে নির্গমন পরিকল্পনা ও নির্গমন নীতি. যদি কোন ফ্লোরে আগুন লাগে তাহলে আগুন লাগার সাথে সাথে সকলকে সতর্কীকরনের নিমিত্তে   হুটার/সাইরেন/কলিং বেল বাজিয়ে সতর্ক করতে হবে।  যে কোন দূর্ঘটনার সময় সুন্দরভাবে কারখানা থেকে নেমে যাওয়ার জন্য একটি নির্গমন পরিকল্পনা ও নীতি থাকা প্রয়োজন । অন্যথায় বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে। আমরা জানি, আগুন ও ধোঁয়া সব সময় উপরের দিকে যায়। সিঁিড়তে কোন প্রকার মালামাল না রাখা হলে আগুন নীচের দিকে নামার সম্ভাবনা খুবই কম। ধরা যাক, ১০ তলা একটি ভবনের ৭ম তলায় আগুন লেগেছে। এ ক্ষেত্রে নীচ তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত সকল শ্রমিক/কর্মচারী কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত নিরাপদ। সুতরাং তাদেরকে তাড়াহুড়ো করে সিঁিড় দিয়ে নীচে নামার কোন প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে বেশী বিপদে আছে যে তলায় আগুন লেগেছে সেই তলার লোক এবং তার উপরের তলার লোক। সুতরাং যে ফ্লোরে আগুন লেগেছে সে তলার লোক সবার আগে নামবে এর পরে উপর তলার লোক। উপরের সকল লোক নামা শেষ হলে যে ফ্লোরে আগুন লেগেছে ঠিক তার নীচ তলার লোক এবং এর পরের ফ্লোরের লোক, এভাবে সকল লোক আস্তে আস্তে নেমে যাবে। কেহ যদি ধোঁয়ায় আটকা পড়েন, তাহলে নাকে রুমাল চেঁেপ ধরে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ পথ দেখে নিন (ধোঁয়া সব সময় হাটুর উপরে থাকে) এবং দাড়িয়ে আস্তে আস্তে হেটে বের হয়ে যান। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অগ্নি দূর্ঘটনার সময় কোন ক্রমেই লিফট ব্যবহার করা যাবে না। যদি আপনার গায়ে আগুন ধরে যায় তাহলে দৌড়া-দৌড়ি না করে মাটিতে শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি করুন, আগুন নিভে যাবে। ফোম টাইপ এক্সটিংগুইসার অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র অগ্নি নির্বাপণ কাজে ব্যবহারের সময় নজেলটি আগুনের দিকে তাক করে বাতাসের অনুকূলে থেকে অপারেটিং লিভারে/ প্রেসার রিলিজে চাজ দিলে ফোম নজলের মাধ্যমে বের হওয়ার সময় বাতাস টেনে নিয়ে নজলের মাধ্যে আলোড়িত হয়ে ফোমে পরিনত হয়ে ফোম নির্গত হবে। যা তরল ও গ্যাসিয় ছোট খাট অগ্নি নির্বাপণ করে। …

কেমিক্যাল ফোম টাইপ এস্টিংগুইশার

১০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হালকা ষ্টিলের তৈরি গোলাকার একটি সিলিন্ডার। যার এক মুখ খোলা। সিলিন্ডারের উপরের অংশে একটি নব আছে। নবের নিচের অংশকে প্ল­াঞ্জার বলা হয় এবং প্ল­াঞ্জারের নিচে স্প্রিং লোডেড  সিলিন্ডার ডিস আছে। সিলিন্ডারের ক্যাপের পার্শ্বে একটি নজল আছে। এই যন্ত্রের দুটি কন্টেইনার আছে। একটি ইনার কন্টেইনার অপরটি আউটার কন্টেইনার।

এ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে ২টি কনটেনার থাকে। একটি বাহিরের ও একটি ভিতরের কনটেনার। বাহিরের কনটেনারে ৮ পার্সেন্ট সেডিয়াম বাই-কার্বনেটের সাথে ৩ পার্সেন্টে স্টেবিলাইজার মিশ্রিত করে ব্যবহার করা হয়। ফোমের বুদবুদের স্থায়িত্বশীলতার জন্য এ স্টেবিলাইজার ব্যবহার করা হয়। স্টেবিলাইজার চার প্রকার। এর যে কোন একটি ৩ পার্সেন্ট সডিয়াম বাই কার্বনেটের সাথে মিশ্রিত থাকে। স্টেবিলাইজার গুলি হচেছ ঃ- সেপোনাইন, লিকোরিস, এ্যালবোমিন, টার্কিরেড ওয়েল। ভিতরের কনটেনারে থাকে ১৩ পাসেন্ট এ্যালুঃ সালফেট।

অল্প গরম পানিতে মিশ্রিত করলে সহজে গলে যায়। তারপর ভিতরের কনটেনারে ভর্তি করতে হয়। অগ্নি দুর্ঘটনার সময় দু কনটেনারের কেমিক্যাল মিশ্রিত করে দিলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ফোম, কার্বন ডাই অক্সাইড চাপ সৃষ্টি করে ফোমকে ঠেলে বের করে আগুনে নিক্ষেপ করে। সোডিয়াম সালফেট ফোমের সাথে মিশ্রিত থাকে।

সব ফোম অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রকে সেলফ এ্যাসপিরেটিং ফোম এক্সটিংগুইসার বলে। এয়ার ফোম এক্সটিংগুইসার নামেও এ পরিচিত। এস অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে একটি মাত্র কনটেনার থাকে। স্প্রেসার টাইপ বা গ্যাস কার্টজ টাইপ দু ধরণের এ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। এতে মেকানিক্যাল ফোম কনসেনট্রেট মিশ্রিত পানি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত ভরে রাখা হয়। গ্যাস কার্টিজ টাইপে গ্যাস কার্টিজ ও প্রেসার টাইপে বাতাস বা নাইট্রোজেন গ্যাস দ্বারা চাপ দেয়া থাকে।

এসব অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ডিসচার্জ টিউবের শেষ অংশে বিশেষ ধরণের নজল থাকে। ব্যবহারের সময় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে রক্ষিত গ্যাস কার্টিজ থেকে গ্যাস বের হয়ে বা প্রয়োগকৃত চাপ ফোম কনসেনট্রেট মিশ্রিত পানি নজল দিয়ে বের হবার সময় বাতাস টেনে নিয়ে আলোড়িত হয়ে ফোমে পরিনত হয়ে নির্গমন করে।

যতœ ও রক্ষণাবেক্ষণ

ব্যবহারের পর পরই যন্ত্রটি পরিস্কার পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। ব্যবহারের পর কোনক্রমেই যেন যন্ত্রের ভিতরে কোন অবশিষ্ট দ্রবন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ উক্ত দ্রব্যন এল কালি জাতিয় যা যন্ত্রটি নষ্ট করতে সক্ষম। কোনক্রমেই রৌদ্রের আলোতে রাখা যাবে না। নজল পরিস্কার রাখতে হবে। যন্ত্রটি উল্টানো যাবে না।

পোশাক শিল্প কারখানায় আগুন লাগলে করণীয় ঃ

এটি খুবই গুরুত্ব¡পূর্ণ যে কারখানায় আগুন লাগলে কি করতে হবে। আগুন লাগলে ভয় পাবেন না বা বিচলিত হবেন না। আগুন লাগতেই পারে, তবে তা কমপক্ষে ১০/১৫ মিনিটের আগে ছড়াবে না, যদি উহা থিনার বা পেট্রোল বা কোন তেলের আগুন না হয়। অথচ একটি ৮/১০ তলা বা তারও অধিক ভবন থেকে সকল শ্রমিক/কর্মচারী নেমে যেতে ৫ মিনিটের বেশী সময় লাগে না। প্রথমে নিশ্চিত হন যে কারখানায় সত্যিই আগুন লাগছে কি না। যদি লেগে থাকে, তবে কোথায় লেগেছে তা ভাল করে জানুন এবং তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে (স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত) নিকটস্থ সিঁিড় দিয়ে নীচে নেমে যান।

কারখানায় আগুন লাগলে নিম্নলিখিত কাজসমূহ দ্রুত সম্পাদন করতে হবে ঃ

  • প্রথমেই ফায়ার এ্যালার্ম বা ঘন্টা বাজিয়ে সকলকে দূর্ঘটনার বিষয়ে সতর্ক করতে হবে।
  • কারখানার বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে
  • নিকটবর্তী ফায়ার ষ্টেশন বা ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারকে অগ্নি দূর্ঘটনার বিষয়ে সঠিক ঠিকানা এবং তথ্য প্রদানপূর্বক অবগত করাতে হবে। (ফায়ার সার্ভিসের জরুরী নম্বর- ৯৫৫৫৫৫৫ অথবা ১০২)
  • কারখানায় গঠিত (প্রশিক্ষিত) অগ্নি নির্বাপক দল আগুন নেভানোর চেষ্টা করবে।
  • উদ্ধারকারীদল কারখানার সকল ফ্লোরের শ্রমিক/কর্মচারীকে সুশৃঙ্খলভাবে কারখানা থেকে বের হতে সাহায্য করবে এবং কারখানার ফ্লোরে কোথাও কোন শ্রমিক/কর্মচারী আছে কি না ভালভাবে খোঁজ করে দেখবে।
  • প্রাথমিক চিকিৎসা দল দূর্ঘটনায় কোন শ্রমিক/কর্মচারী আহত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে আগুন কোথায় লেগেছে এ বিষয়ে তথ্য দিতে হবে, কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার (বৈদ্যুতিক স্থাপনা, কেমিক্যাল গোডাউন, জেনারেটর রূম, বয়লার রূম ইত্যাদি) অবস্থান জানাতে হবে এবং আগুন নির্বাপনের কাজে সকল ধরণের সহযোগিতা করতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, কারখানায় আগুন লাগলে করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী সম্বলিত ফায়ার সেফটি প্ল্যান এবং ইভাকুয়েশন প্ল্যান থাকতে হবে। প্রতি কারখানায় জরুরী দূর্ঘটনা মোকাবেলা কমিটি গঠন করতে হবে এবং নিয়মিত শ্রমিক/কর্মচারীদের সমন্বয়ে আলোচনা সভা করতে হবে।