Select Page

কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা সিওটু টাইপ

কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা সিওটু CO2 টাইপ সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে কারখানা এলাকার পরিবেশ নিরাপদ, পরিষ্কারক পরিচ্ছন্ন ও ঝুকিমূক্ত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এটিও একটি রাসায়নিক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। এতে পাউডারের পরিবর্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে পরিবেশ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাপনার উপর সচেতনতা সৃষ্টি করবেন। এ পাঠ সমাপনান্তে আপনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে সমর্থ হবেন …

১। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের বৈশিষ্ট্য।

২। কার্বন ডাই অক্সাইড (সিওটু) অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের গঠন।

৩। কার্বন ডাই অক্সাইড যন্ত্রের অপারেশন কার্যক্রম ও স্থায়ীত্ব।

৪। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ব্যবহারে সুবিধা এবং অসুবিধা সমুহ ।

৫। কার্বন ডাই অক্সাইড অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের পরীক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ।

কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের বৈশিষ্ট্যঃ

ক. সিওটু রংহীন , বর্ণহীন, গন্ধহীন পরিস্কার গ্যাস।

খ. সিওটু নিজে জ্বলে না এবং অপরকে জ্বলতে সাহায্য   করে না ।

গ. ইহা বিদ্যুৎ কুপরিবাহী ।

ঘ. সিওটু গ্যাস উদ্বায়ী  ।

ঙ. এক কেজি সিওটু তরল হাফ কিউবিক মিটারযুক্ত     গ্যাস তৈরী করতে পারে ।

চ. ইহার ডেনজারাস কনসেনট্রেশন ৯% -১০%।

বহ্যিক গঠন ঃ সিওটু অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ম্যাঙ্গানিজ স্টীলের তৈরী । এ সিলিন্ডার সীমলেস সিলিন্ডার  । সিওটু গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিবর্গ ইঞ্চিতে ৩৩৭৫ পাঃ প্রেসারে পরিক্ষীত। সিলিন্ডার বহন করার জন্য একটি ক্যারিং হান্ডেল আছে। সিওটু সিলিন্ডারে একটি অপারেটিং লিভার (কোনটিতে অপারেটিং হুইল থাকে), সেফটি পিন, ফ্লো কান্ট্রোল ভাল্ব , হাইটেনশন ডিসচার্জ পাইপ এবং গ্যাস বের হবার হর্ণ আছে।। এটি অতি ভারী ষ্টিল দিয়ে তৈরী একটি সিলিন্ডার। যন্ত্রটির মাথায় একটি হাতল, একটি লিভার বা ট্রিগার, একটি ডেলিভারী হোজ পাইপ এবং হোজ পাইপের মাথায় হর্ণ থাকে। এ হর্ণটি গ্যাস ছড়িয়ে দেয় এবং হাতকে অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। এছাড়া হাতল এবং লিভারের মাঝখানে একটি সেফটি পিন থাকে যাতে বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় লিভারে চাপ পড়ে পাউডার বের হয়ে না যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা নির্দেশ করার জন্য সেফটি পিনের মাথায় একটি সীল থাকে। কখনও কখনও গ্যাস বের করার জন্য মাথায় একটি হুইল থাকে।

ভিতরের গঠন ঃ যন্ত্রটির ভিতরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে, যা নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে তরল করা থাকে। অতিরিক্ত চাপে যাতে যন্ত্রটি ফেটে না যায় বা বিস্ফোরণ না ঘটে সেজন্য যন্ত্রটি খুব শক্ত ষ্টিল দিয়ে তৈরী করা হয়। গ্যাস বের করার জন্য ভিতরে একটি ডিসচার্জ পাইপ থাকে। লিভার চাপ দিলে  গ্যাস নিজের চাপেই বের হয়ে যায়।

কোন্ কোন্ আগুনে ব্যবহার করা হয় ঃ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা সিওটু সকল আগুন নির্বাপনের কাজেই ব্যবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে বিদ্যুৎ ও তেলের আগুনে ব্যবহার করা। এ যন্ত্রটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড একটি শীতল ও কুয়াশার মত গ্যাস যা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং কাপড়-চোপড়ের কোন ক্ষতি করে না। ফলে এটি ব্যবহার করার পর পরিস্কার করার প্রয়োজন হয় না। এ যন্ত্রটির বিশেষ দুর্বলতা হচ্ছে এটি আগুনের শিখা নির্বাপন করে। আগুনের মূলে পৌছে ভিত্তি নির্বাপন করতে পারে না। ফলে আগুন আবার পুনরায় প্রজ্জ্বলিত (হতে পারে। সেজন্য সলিড ফায়ার বা এ ক্লাস আগুন নির্বাপনে এটি তেমন কার্যকরী নয়।

ব্যবহার পদ্ধতি ঃ সিওটু গ্যাস ৭৩ বার চাপে এবং ৩১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড  তাপমাত্রায় তরলায়িত করে   সিলিন্ডারে প্রবিষ্ট করানো থাকে। সিলিন্ডারের ২/৩ ভাগ তরল এবং ১/৩ ভাগ গ্যাস দ্বারা পুর্ণ থাকে। অগ্নিকান্ডের সময় ব্রাকেটমুক্ত করে সিলিন্ডারের হর্ণটি আগুনের দিকে তাক করে সেফটি পিন ছিড়ে অপারেটিং ডিভাইসে চাপ দিলে প্রচন্ড আওয়াজে সিওটু তরল আকারে বের হবে এবং উহা  ডিসচার্জ হর্ণে বাতাসের সংস্পর্শে এসে গ্যাসীয় আকার ধারণ করে,  আগুনে বিস্তৃত হয়ে ঠান্ডা অবস্থা ও তুষার আবরণ সৃষ্টি করে আগুন নিভাবে।  এখানে- ৭৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়।প্রথমে দেয়াল থেকে যন্ত্রটি নামিয়ে আনুন। এরপরে কয়েকবার ঝাকিয়ে নিন। এবার হাতল ও লিভারের মাঝখানের সেফটি পিনের মাথার সীলটি খুলুন এবং সেফটি পিনটি টান দিয়ে বের করুন। এবার ডান হাত দিয়ে যন্ত্রটি বহন করে নিয়ে আগুনের যতটুকু সম্ভব কাছে যান। এবার বাতাসের অনুকুলে গিয়ে বাম হাত দিয়ে হর্ণের হাতল ধরে আগুনের দিকে তাক করান। এবার লিভারে চাপ দিন এবং আগুন নিভানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত হর্ণটি পাশাপাশি নাড়াতে (থাকুন।

সাবধানতা ঃ কমিটি সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি নিশ্চিত করে কারখানার অভ্যন্তরে ও চারপাশে পরিবেশ সহায়ক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করবেন। যেহেতু কার্বন-ডাই-অক্সাইড অত্যন্ত ঠান্ডা গ্যাস, তাই উহা যাতে নাকে মুখে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যদি কোনক্রমে নাকে মুখে বা চোখে লাগে তবে তাৎক্ষনিকভাবে মুখমন্ডল ও চোখ ধুয়ে নিন। এটি বদ্ধ কক্ষে ব্যবহার করা হলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাবে। ফলে শ্বাসকষ্ট হবে। বাতাসে ৫-৯% এর উপর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা হলে মানুষের শ্বাস কষ্ট হয়। তাই এটি ব্যবহার করার পর সকল দরজা জানালা খুলে দিতে হবে

সিলিন্ডারে ওজন                    স্থায়ীত্ব                 সুটিং রেঞ্জ

৬.৮ কেজি                        ২৬ সেকেন্ড               ৩ মিটার

৩ কেজি                           ১৫ সেকেন্ড          ১.৫০ মিটার

৪।  সিওটু গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

ক। সুবিধা

(১) সিওটু গ্যাস নন টক্সিক।

(২) ধাতব পদার্থ ব্যতীত অধিকাংশ পদার্থে প্রতিক্রিয়া করে না।

(৩) ইহা নিজস্ব চাপে সিলিন্ডার থেকে বের হয় ।

(৪) ইহা স্পর্শকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ক্ষতি করে না।

(৫) ইহা দাহ্য বস্তুর উপর কোন প্রভাব ফেলে না ।

খ। অসুবিধা সমুহঃ

(১) সিওটু গ্যাসের স্থায়ীত্ব কম । সুতরাং অল্প সময়ে পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে হবে।

(২)এ গ্যাসে বের হবার সময় নি¤œ তাপমাত্রায় Ñ৭৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ¯েœা ফ্লেগ তৈরী করে,  ইহার সংস্পর্শে কুলবার্ন হতে পারে।

(৩)কনফাইন স্পেসে ইহা দৃষ্টি শক্তি সীমিত করে

(৪) বাতাসে ইহার ঘনত্ব ৯ % হলে শ্বাসকষ্ট হবে। খোলা জায়গায় সিওটুর কার্যকারিতা কম। এ ক্ষেত্রে পূনরায় আগুন লাগতে পারে।

৫। সিওটু যন্ত্রের পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ

ক। সিওটু গ্যাস দীর্ঘদিন (প্রায় ৫ বছর) রাখা যায়। তবে পিরিয়ডিকালীন পরীক্ষান্তে সমগ্র ওজনের ১০% কম হলে উহা পুনঃ ভর্তি করতে হবে।

খ। গ্যাস সিলিন্ডার যাতে মরিচা না ধরে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

গ। হর্ণ এবং ফ্লেক্সিবেল হোজ ক্ষতিগ্র¯ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

তাপ থেকে দুরে রাখতে হবে।