গার্মেন্টস ভবন ধসের কারন:
গার্মেন্টস ভবন ধসের কারন সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো
- যে কাজের জন্য ভবন নির্মিত হবে সেই কাজের জন্য বিল্ডিং কোড না মানলে। যেমন : শপিং মলের জন্য যে বিল্ডিং কোড, গার্মেন্টস শিল্পের জন্য একই বিল্ডিং কোড নয়।
- গার্মেন্টস শিল্পের জন্য বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মিত না হলে।
ভবন তৈরীতে কাজের গাফিলতি থাকলে , ভবনের ত্রুটিপূর্ণ নকশা হলে, স্বীকৃত ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা তৈরীকৃত ভবনের নকশা তৈরী না করলে - যে জায়গায় ভবন নির্মিত হবে সে জায়গার মাটি ভবন তৈরীর জন্য উপযুক্ত কিনা সেজন্য অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির উপাদান পরীক্ষা করে না নিলে
- মাটির ধরন অনুযায়ী পাইলিং এর গভীরতা সঠিক না হলে, ভুমিকম্প হলে , খরচ বাচানোর জন্য সাধারন ইঞ্জিনিয়ার এবং সস্তা শ্রমিক দ্বারা ভবন নির্মিত হলে।
- কম দামি এবং মানসম্পন্নহীন জিনিস দিয়ে ভবন তৈরী করলে। যেমন: ভেজাল সিমেন্ট, দুর্বল ইট, নি¤œমানের রড, পরিমানের তুলনায় নির্মান সামগ্রী কম ব্যবহার করলে
- ঝুকিপূর্ণ স্থানে ভবন নির্মান করলে যেমন: পুরনো ডোবা, পুকুর, খাল বা বিল ভরাট করে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) কতৃক অনুমোদিত তলার চেয়ে অতিরিক্ত তলা স্থাপন করলে
- নির্মিতব্য ভবনের পিলারের ধারন ক্ষমতার (পি.এস.আই – চঝও) চেয়ে অতিরিক্ত লোড বহন করলে গার্মেন্টস ভবন ধসের কারন সম্পর্কে আমাদের আরো পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
গামেন্টস শিল্পে ভবন নির্মানে যে সকল প্রশ্নের উত্তর জানাতে হবে:
ভবন নির্মাণের জায়গায় সয়েল টেস্ট করা হয়েছে কিনা?
জলাশয় ভরাট করা হলে সেখানে মাননিয়ন্ত্রিতভাবে ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা?
ভবনের নকশা কোন নির্ভরযোগ্য স্থপতি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে কিনা?
ভবন নির্মিত স্থানটি সঠিকভাবে পাইলিং করা হয়েছে কিন?
ভবন কাঠামোর ডিজাইন নির্ভরযোগ্য কোন কাঠামো প্রকৌশলীকে দিয়ে করানো হয়েছে কিনা?
ভবন নির্মাণে ওয়ার্কিং ড্রয়িং অনুসাওে করা হচ্ছে কিনা?
ভবন নির্মাণ কোন প্রকৌশলীর তত্বাবধানে হয়েছে কিনা?
ভবন ধসে আটকে পড়া ব্যক্তির করণীয়:
অবস্থান ভাল করে অনুমান করুন:
কোন নড়াচড়া করার আগে আপনার অবস্থানটি বুঝে নিন যে আপনি ভবনটির ঠিক কোন পাশে আছেন। কোন দিকে উপর আর কোন দিকে নিচ তা বোঝার জন্য আপনার জিহ্বা বের করে থুথু গড়িয়ে যেতে দিন। যদি থুথু নাকের দিকে যায় বা মুখের দিকে যায় বা যেদিকে যায় সেদিক নিচু বা ভুমি সমতল। দেখে নিন আশেপাশে আর কেউ বেচে আছে কিনা।
আপনার সাথে মোবাইল বা অন্য কোন ডিভাইস যদি থাকে তাহলে আপনার পরিবার বা পরিচিত কাউকে ফোন বা মেসেজ করে অথবা ফেসবুকে আপনার বিপদের কথা বলে সাহায্য চান।
দুর্যোগের পর জোরে জোরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করুন, তবে আপনার সবটুকু শক্তি নিঃশেষ করে নয় কারণ আপনাকে হয়তো টিকে থাকতে হবে দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব। আপনার শক্তিকে সঞ্চয় করে রাখুন।
আপনার যদি বাতাসের অভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে নাক মুখ চেপে শ্বাস নিন, যেন বাতাস কম বেরিয়ে যায়। এতে আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া অক্সিজেন আবার আপনাকে বেচে তাকতে সাহায্য করবে।
তারপর ও যদি কোন উদ্ধারকারী না আসেন তাহলে চেষ্টা করুন যে জিনিসে চাপা পড়েছেন তা সরিয়ে ডেদিকে আলো সেদিকে এগিয়ে যেতে। তবে খুবই সাবধানে কারন আপনি সেটা সরাতে গিয়ে আরো বেশি চাপা পড়তে পারেন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় শক্ত পিলার বা খুটি এর কাছ ধরে এগিয়ে যাবেন যদি মনে হয় সেটি এখন ও শক্তভাবে ঠিকে আছে।
আশেপাশে আর কোন আটকা মানুষ তাকলে তাদের সাহায্য চাইতে পারেন,যদি তারা তা পারে। আপনি মুক্ত হয়ে গেলে আরেকজনকে চাপা পড়া থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করুন।
বেঁচে থাকার জন্য দরকারী যেসব জিনিস পাবেন তা ব্যবহারে মিতব্যায়ী হোন কারণ আপনি জানেন না আপনাকে একানে কতক্ষণ আটকে থাকতে হবে।
সর্বোপরি কখনোই আশা হারাবেন না। নিরাশ কথাবার্তা বলবেন না কারন এটা আপনাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে না বরং কেউ পাশে কেউ থাকলে তাকে ও নিরাশ করে করে দিবে। আশা আপনাকে বেশি সময় বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।
গার্মেন্টস ভবন তৈরীর পূর্বে করণীয়:
গার্মেন্টস শিল্পের জন্য নির্ধারিত বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মান করতে হবে।
ভবন তৈরীর সময় কেহ কাজে গাফিলতি করতে পারবে না।
স্বীকৃত ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ভবনের নকশা তৈরী করতে হবে।
যে জায়গায় ভবন নির্মিত হবে সে য়গার মাটি ভবন তৈরীর জন্য উপযুক্ত কিনা অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির উপাদান পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
মাটির ধরন অনুযায়ী অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার কর্তৃক নির্দেশিত গভীরতা পর্যন্ত পাইলিং করিয়ে নিতে হবে।
অভিজ্ঞ এবং স্বীকৃত এবং নির্ভরযোগ্য ইঞ্জিনিয়ার এবং দক্ষ শ্রমিক দ্বারা ভবন নির্মান করতে হবে।
দামি এবং মানসম্পন্ন জিনিস দিয়ে ভবন তৈরী করতে হবে। যেমন: মানসম্পন্ন সিমেন্ট, শক্ত ইট, উচ্চমানের রড, পরিমান মত নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
ঝুকিপূর্ণ স্থানে ভবন নির্মান করা যাবে না। যেমন: পুরনো ডোবা, পুকুর, খাল বা বিল ভরাট করে। তবে অভিজ্ঞ এবং স্বীকৃত ইঞ্জিনিয়ারের সঠিক পরামর্শ এবং তত্বাবধানে যথাপোযুক্ত পাইলিং পূর্বক ভবন নির্মান করা যাবে।
ভবন তৈরীর পূর্বে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) কতৃক অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদিত তলার চেয়ে অতিরিক্ত তলা স্থাপন করা যাবে না।
নির্মিতব্য ভবনের পিলারের ধারন ক্ষমতার (পি.এস.আই) চেয়ে অতিরিক্ত লোড ভবনে বহন করা যাবে না।