মানবাধিকার ও সমন্বয়ের নীতিমালা
ভূমিকা ঃ
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি ১০০% রপ্তানীমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ শিল্প খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। নতুন শতাব্দীর উষালগ্নে এর উন্নতি, ব্যাপ্তি বা প্রসার খুবই উৎসাহজনক। অটো গ্র“প তার জন্মলগ্ন থেকেই উৎকৃষ্ট কাজের মান বজায় রাখার প্রতিশ্র“তি নিয়ে পথ চলা শুরু করে। তাই অটো পোশাক রপ্তানীর ক্ষেত্রে আজ একটি পরিচিত নাম। এই গ্র“প এর প্রতিটি কারখানার উত্তর উত্তর উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে অটো গ্র“পের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই উদ্দেশ্যকে সঠিকভাবে কার্যে পরিনত করতে, কর্মচারীদের জন্য সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার ও সমন্বয়ের মূলনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে অটো কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, আইএলও কনভেনশন ইত্যাদি ছাড়াও মানবাধিকার ও দেশে প্রচলিত আইন-কানুন অনুসরন করে অটো গ্র“পের কারখানা পরিচালনার স্বার্থে নিুবর্ণিত নীতিমালা সমূহ প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সময়ের সাথে সাথে দেশে প্রচলিত আইনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বা নতুন কোন আইন প্রণয়ন করা হলে অটো গ্র“পেও অনুরূপভাবে তা অনুসরণপূর্বক ইহার নীতিমালা সংশোধন করা হবে।
অটো গ্র“পের সকল কারখানা ও গ্র“পের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকগনের জন্য অত্র নীতিমালা সমভাবে প্রযোজ্য।
নিয়োগ নীতিমালা ঃ
অটো গ্র“প দক্ষকর্মী বাছাই ও নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা নিুবর্ণিত নীতিসমূহ অনুসরন করে থাকে ঃ
- অটো গ্র“পের প্রতিটি শিল্প কারখানায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী/পুরুষ, কালো/ফর্সা, যুবক/বৃদ্ধ, আতœীয়/অনাতœীয়, ভেদাভেদ না করে সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা হয়।
- প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক, শারিরীক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম ও সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। ১৪ বছরের নীচে কোন লোক নিয়োগ সম্পুর্নভাবে নিষিদ্ধ।
- শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিুোক্ত প্রক্রিয়া সমূহ অনুসরন করা হয়ঃ
১) সাক্ষাৎকারের জন্য প্রার্থী আহ্বানঃ
- শূন্য পদে নিয়োগের জন্য কারখানার মেইন গেইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন।
- ম্যানেজার/সুপারভাইজারদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ।
- গুরুত্বপূর্ণ শূন্যপদে নিয়োগের জন্য হেড অফিসের মাধ্যমে জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
২) যোগ্যতা/দক্ষতা যাচাই পরীক্ষাঃ সকল কাজের জন্য যথাযথ ব্যক্তি নিয়োগের উদ্দেশ্যে মৌখিক, জব টেষ্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে লিখিত পরীক্ষা গ্রহন করা হয়ে থাকে।
- শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে নিয়োগের শর্ত পূরণকারী প্রার্থীদের আবেদন পত্র বাছাইকরণ।
- সাক্ষাৎকার গ্রহন, পরীক্ষা ও কর্মদক্ষতার মান আবেদন পত্রের উল্টোদিকে প্রডাকশন ম্যানেজার/বিভাগীয় প্রধান কতৃক লিপিবদ্ধকরণ।
- সাক্ষাৎকার ও দক্ষতা পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা এবং যোগ্য ব্যক্তি বাছাইকরণ।
৫। নিয়োগ কর্তৃপক্ষঃ
ক। হেড অফিস (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ) হিসাবরক্ষক, মার্চেন্ডাইজার, কমার্শিয়াল, সেফটি, মেডিকেল, নিরাপত্তা, প্রসাশন ও কমপ্লায়েন্স/ওয়েলফেয়ার কর্মকর্তা সহ প্রোডাকশন ম্যানেজার এবং তদোর্ধ পদের নিয়োগ সম্পন্ন করে থাকে।
খ। কারখানা কর্তৃপক্ষ এ পি এম এবং তদনিু পদের নিয়োগ প্রদান করে থাকে।
৬। নিয়োগ কমিটি ঃ অত্র প্রতিষ্ঠানে নিুবর্নিত কাঠামো অনুযায়ী কমিটির মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী বাছাই ও নিয়োগ প্রদান করা হয়ঃ
ক। কেন্দ্রিয় নিয়োগ কমিটি ঃ
১) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ——————- চেয়ারম্যান
২) নির্বাহী পরিচালক ——————- সদস্য
৩) বিভাগীয় প্রধান ——————- সদস্য
৪) এইচ আর প্রধান ——————- সদস্য
খ। কারখানা ভিত্তিক নিয়োগ কমিটি ঃ
১) পরিচালক ——————- সভাপতি
২) ফ্যাক্টরী ম্যানেজার ——————- সদস্য
৩) ম্যানেজার (এডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স) —————— সদস্য
৪) পিএম অথবা সংশ্লিষ্ট সেকশন ইনচার্জ —————– সদস্য
৫) কমপ্লায়েন্স/ওয়েলফেয়ার অফিসার ——————- সদস্য
০৭। চাকুরী প্রার্থী কর্তৃক উপস্থাপিত অত্যাবশ্যকীয় নথিপত্রঃ যে কোন নিয়োগ লাভে আগ্রহী প্রার্থীকে নিমোক্ত নথিপত্রসমূহ উপস্থাপন করতে হয় ঃ
ক। চারটি পাসপোর্ট সাইজ রঙ্গিন ছবি সহযোগে যথাযথভাবে পূরণকৃত চাকুরীর আবেদন পত্র (ফ্যাক্টরীর নির্ধারিত ফরমে) সহ সাক্ষাৎকারের জন্য সংশ্লিষ্ট মানব সম্পদ বিভাগে উপস্থিত থাকতে হবে। পাসপোর্ট সাইজ ছবি ২টি পার্সোনাল ফাইলে, ১টি সার্ভিস বইয়ে এবং ১টি আই.ডি কার্ডের জন্য ব্যবহার করতে হয়। নিুবর্নিত কাগজপত্র ছাড়া কোন অবস্থায়ই চাকুরীতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয় না।
খ। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র। এই সনদপত্র প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ লক্ষ্য করতে হবে ঃ
১) ৮ম শ্রেনী উত্তীর্ন এবং তদনিু শ্রেনীতে অধ্যয়নের বেলায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ‘স্কুল পরিত্যাগপত্র/ ছাড়পত্র’ সংগ্রহ করতে হবে।
২) যারা শুধুমাত্র অক্ষর চেনা ও নাম স্বাক্ষর করতে পারে তারা স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা চেয়ারম্যানের নিকট থেকে প্রার্থী ‘অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন’ এই মর্মে সনদপত্র সংগ্রহ করবে যাতে জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকে।
৩) ৯ম শ্রেণী উত্তীর্ন বা ১০ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরতদের বোর্ডের রেজিষ্ট্রেশন সনদপত্র জমা দিতে হবে।
৪) এস.এস.সি এবং তার সমমান ও তদুর্ধ পরীক্ষায় উত্তীর্নদের শিক্ষা বোর্ডের সনদপত্র জমা দিতে হবে।
৫) যারা শিক্ষা বোর্ডের মূল সনদপত্র পায় নাই তারা সাময়িক সনদপত্র উপস্থাপন করতে হবে।
৬) যারা সবেমাত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে শিক্ষা র্বোড থেকে কোন সনদপত্র উত্তোলন করতে পারেনি। তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে প্রশংসাপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
৭) মানবাধিকার কর্তিক প্রার্থীকে আবেদনপত্র যাচাই শেষে মূল সনদপত্র ফেরত দেয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিটি সনদপত্রের শুধুমাত্র ফটোকপি সংরক্ষন করা হয় এবং এই ফটোকপি ফ্যাক্টরী ম্যানেজার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে।
৮) মেকানিক/ ইলেকট্রিশিয়ান বা তদ্রুপ পদ যার জন্য কারিগরী শিক্ষা আবশ্যকীয় সেক্ষেত্রে কারিগরী শিক্ষায় সাফল্যজনক উর্ত্তীন হওয়ার স্বপক্ষে সনদপত্র উপস্থাপন করতে হবে।
৯) প্রয়োজনে বিশেষ কোন পদের জন্য অভিজ্ঞতা সনদপত্র।
১০) কারখানার ডাক্তার কর্তৃক বয়স যাচাই এবং শারীরিক যোগ্যতার সনদ (নির্ধারিত ফরমে)।
৮। প্রার্থীর বয়স যাচাই ঃ
ক। যে সকল ক্ষেত্রে প্রার্থী নিশ্চিতভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক (শারীরিক গঠন পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে) এবং শিক্ষা বোর্ডের সনদ নিশ্চিত ভাবে প্রমান করে যে প্রার্থী প্রাপ্ত বয়স্ক সে ক্ষেত্রে পুনরায় ডাক্তার কর্তৃক বয়স যাচাই করার প্রয়োজন নাই। তবে শারিরীক যোগ্যতা সনদ পত্র নিতে হয়। এছাড়া মানবাধিকার কর্তিক সকল প্রাথীকে ডাক্তার কর্তৃক বয়স যাচাই করা হয়। এই বয়স যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে পুরুষ শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে পুরুষ ডাক্তার এবং মহিলা শ্রমিকদের জন্য মহিলা ডাক্তার/নার্স নিয়োজিত রয়েছেন। অনেক প্রার্থীর সঠিক বয়স যাচাইয়ের লক্ষ্যে সু-প্রতিষ্ঠিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বোন টেস্ট (ইড়হব ঞবংঃ) এর জন্য পাাঠানো হয়।
খ। প্রার্থীর বয়স সঠিক ভাবে প্রমানিত হওয়া স্বাপেক্ষেই তাকে পরবর্তী স্বাক্ষাতের জন্য মনোনীত করা হয়।
গ। প্রার্থীর বয়স যাচাই- এর সময় ডাক্তারের নিকট আবেদন পত্র এবং বয়স যাচাই ফরম উভয়টিই উপস্থাপন করা হয়। ডাক্তার স্ব-হস্তে বয়স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি উল্লেখপূর্বক উভয় নথিতে স্বাক্ষর প্রদান করেন। আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত প্রার্থীর ছবিও সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কর্তৃক এমনভাবে সত্যায়িত করা হয় যাতে স্বাক্ষর আবেদন পত্র ও ছবি উভয়টিতে বিস্তৃত হয়।
৯। চূড়ান্ত নির্বাচন ও চাকুরীতে যোগদান ঃ
ক। সাক্ষাৎকার দক্ষতা পরীক্ষা এবং বয়স যাচাই-এ উত্তীর্ন প্রার্থীদের চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।
খ। কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধারন করা হয়।
গ। যোগদানের তারিখ নিশ্চিত করা হয়।
ঘ। বেতন-ভাতা অন্যান্য সুবিধাদি ও প্রচলিত শ্রম আইন মোতাবেক চাকুরীর শর্ত উল্লেখ পূর্বক (কোম্পানীর নির্ধারিত ফরমে) নিয়োগপত্র প্রধান করা হয়। নিয়োগ পত্রের সাথে শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য চাকুরীর বিধিমালা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও নীতিমালা সংক্ষিপ্ত বিবরন সম্বলিত একটি হ্যান্ডবুক প্রদান করা হয়। সকল নথিপত্র হস্তান্তরের প্রমান স্বরুপ ফাইল কপিতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের স্বাক্ষর গ্রহন করা হয়। নিয়োগপত্র হস্তান্তরের প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে তার বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, অধিকার এবং চাকুরীর বিধিমালা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা প্রদান করা হয়।
১০। অবেক্ষমান কাল (প্রবেশনাল পিরিয়ড) ঃ
প্রতিটি শ্রমিককে তিন মাসের জন্য অবেক্ষমান রাখা হয়। এই সময়কালে তার শৃংখলা ও কাজের মান সন্তোষজনক প্রতীয়মান হলে তাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয় নতুবা এই অবেক্ষমান কাল আরও তিন মাসের জন্য বর্ধিত করা হয়। উল্লেখ্য, অবেক্ষমান কালের মধ্যে কোন মানবাধিকার শ্রমিক কর্তৃপক্ষের কাঙ্খিত সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হলে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই চাকুরী থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়।