Select Page

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার নীতিমালা

রাসায়নিক দ্রব্য আমাদের জীবনমানকে উন্নত করেছে ঠিকই তবে এর অপব্যবহারে বা অসবাধানতার সাথে ব্যবহারের কারনে আমাদের জীবনের ওপর মারাত্বক ক্ষতি বা মৃত্যু উভয়ই হতে পারে। ওয়াশিং প্লান্টে গার্মেন্টসকে বিভিন্ন প্রকারের ধোয়ার জন্য নানা রকম কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেগুলোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। রাসায়নিক দ্রব্য অপব্যবহারে যে সকল ক্ষতি হতে পারে। রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহারে অগ্নিকান্ড, বিষ্ফোরণ, পরিবেশ বিষয়ক ইত্যাদির মত ব্যাপক ঘটনা সংঘটিত হতে পারে যার প্রেক্ষিতে প্রধানত ব্যক্তি ও বস্তুর ক্ষতি সাধিত হয়। ওয়াশিং প্লান্টে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে নিম্নলিখিত ক্ষতির কারন হতে পারেঃ …

  • নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক রাসায়নিক দ্রব্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে যার প্রেক্ষিতে শরীরের অভ্যন্তরে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
  • ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইশার, ফোম টাইম এক্সটিংগুইশার, কার্বন ডাই অক্রাইড টাইপ এক্সটিংগুইশার।
  • খাদ্য বা পানীয়র সাথে মিশে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শরীরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
  • সংবেদনশীল স্থান যেমন চোখ, মূখ, নাক ইত্যাদির সংস্পর্শে এসে মারাত্বক জখম, যন্ত্রনা সৃষ্টি এমনকি চিরতরে পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • প্রত্যেক অগ্নি নির্বাপক কর্মীকে সুবিধাজনক গ্লাভস, বুট ও অগ্নি প্রতিরোধক পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • ওয়াশিং প্লান্টে ব্যবহৃত কেমিক্যালের অধিকাংশ অম্ল অথবা ক্ষার জাতীয় দ্রব্য হওয়ায় মানব শরীরের ত্বকে ফুসকুরি ওঠা অথবা পুড়ে যাওয়া সহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
  • ব্যবহারে পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্ভন না করলে মারাত্বক দূর্ঘটনার মাধ্যমে বাষ্প/গ্যাস ইত্যাদি সৃষ্টি হয়ে শ্বাস প্রশ্বাসে বিঘœ ঘটিয়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

নিরাপদ গুদামজাত

কমিকেল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কেমিকেল স্টোর, রং বা কেমিকেল মিক্সিং এরিয়া, প্রিন্টিং মেশিন এরিয়া, ওয়াশ এরিয়া, ডাইং মেশিন এরিয়া, হিট ট্রান্সফার মেশিন এরিয়া, ল্যাবরেটরি, ইমেজ সেটার এরিয়া, প্লেট মেকিং এরিয়া, অফসেট প্রিন্টিং মেশিন এরিয়া ইত্যাদি সেকশনে কেমিকেল ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদীর পরিধান করতে হবে। প্রতিটি সেকশনে পর্যাপ্ত পরিমান পি পি ই যেমন- মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, গগ্লস, গাম বুট সরবরাহ করা আছে।রাসায়নিক দ্রব্য সামগ্রী গুদামজাত করনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবেঃ

  • যদি কোন কারণে কেমিক্যাল রুমে অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটে তবে নি¤েœাক্ত উপায়ে অগ্নি নির্বাপন করতে হবে।
  • অনুপযোগী বস্তু একত্রে গুদামজাত করা যাবে না।
  • অনুপযোগী রসায়নশালা প্রক্রিয়া এড়িয়ে চলা।
  • অবশ্যই কেমিক্যালের কন্টেনার ফুটা, মরিচা এবং ক্ষতিযুক্ত হবেনা। ইহা অবশ্যই সচল হবে।
  • পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাহা ঝুঁকির কারণ নির্মূল করতে পারে।
  • ঠান্ডা এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস যুক্ত জায়গায় রসায়ন বস্তু রাখতে হবে।
  • পানীয় পানির উৎস, প্লান্ট এবং বসবাসের জায়গা হতে রসায়ন শালা পৃথক রাখতে হবে।
  • অগ্নি নিবারন গাড়ী প্রবেশের পথ থাকতে হবে।
  • দৈব দূর্ঘটনা থেকে বৈদ্যুতিক সার্কিট, সুইচ বক্স এবং ফিকচার রক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • অগ্নি শিখা, ঝালাই, ধোঁয়া এবং তাপ বিকিরণ নিষিদ্ধ করা উচিত।
  • শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাজকর্ম গুদামে ও প্লান্টে করা উচিত।

বিষক্রিয়া

ক্যামিকেল রাস্ট ও অন্য যে কোন ভাবে উৎপন্ন রাসায়নিক উচ্ছিষ্ট ক্যামিকেল ইটিপিতে সংযোগ চৌবাচ্চায় ফেলতে হবে। উক্ত ক্যামিকেল সমূহ ইটিপিতে পরিশোধন হয়ে নির্গমণ হবে।বিষক্রিয়া হতে রক্ষার্থে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে নিম্নোক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেঃ

  • যতদুর সম্ভব রসায়ন সম্পর্কে অবগত থাকা যাতে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।
  • কেমিক্যালস নিয়ে মেশিনে কাজ করার সময় সঠিক সরঞ্জামাদি বেছে নিতে হবে।
  • জ্ঞানের অভাবে যাতে দূর্ঘটনা সংঘটিত না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা।
  • মেশিন/সরঞ্জামাদি কর্মস্থলে মেরামতের সময় নিয়ন্ত্রণকারী যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

শুধুমাত্র কেমিক্যাল সংশ্লিষ্ট নির্ধারিত প্রশিক্ষিত ব্যক্তিগণই/কর্মী উপরোক্ত কেমিক্যাল সমুহ ব্যবহার করে থাকে এবং যথাযথ ভাবে রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়। উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ব্যবহারকারী অপারেটরদের কেমিক্যাল ব্যবহারের নিয়মাবলী (ঝ.উ.ঝ ্ চ.চ.ঊ. ঞৎধরহরহম) এর মাধ্যমে কর্মীদের ব্যবহৃত সকল
কেমিক্যালের পরিচয়, কি কি উপাদান দিয়ে তৈরী, এদের ব্যবহার বিধি, ক্ষতিকর দিকসমূহ ছাড়াও এগুলো মানব দেহের জন্য কতটুক ু ক্ষতিকর এইসব বিষয়ে কর্মীদের সম্যক ধারনা দেয়া হয়। নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমিকদের কাজে সহযোগিতা করা, নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবগত করা এবং তাদের কর্মস্থলে কেমিক্যাল ব্যবহারে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা। শ্রমিকদের উচিত ঝুঁকি সম্পর্কে নিজেকে সতর্ক রাখা এবং অন্যদেরকে এ ব্যাপারে অবগত করা। সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে ঃ

  • সমস্ত সরঞ্জামাদির যথাযথ ব্যবহার করণ যাহা নিজেকে এবং অন্যদেরকেও ক্ষতি হতে রক্ষা করে।
  • কাজ আরম্ভের পূর্বে সরঞ্জামাদির যথাযথ পরীক্ষা করা এবং যে কোন জরুরী ভিত্তিতে পরিদর্শককে অবহিত করা।
  • রসায়ন ব্যবহারে যে বিপদ সংঘঠিত হতে পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট মনযোগী হওয়া।
  • ক্ষতি বা রোগ ভোগের সময় তাকে সঠিক চিকিৎসা ও ক্ষতিপুরন দেয়া।

ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম

ওয়াশিং প্লান্টে কাজে নিয়োজিত সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামের অবশ্যই ব্যবস্থা রাখতে হবেঃ

  • নোজ মাস্ক
  • প্রটেকটিভ গ্লাভস
  • এপ্রন (ওয়াশের জন্য)
  • রেক্সিন এপ্রন (স্যান্ড ব্লাস্টের জন্য)
  • রাবারের তৈরী গাম বুট/শর্ট বুট
  • আই প্রটেকটর
  • তাৎক্ষনিক চক্ষু ধৌত করার ব্যবস্থা।

এছাড়া কেমিক্যাল পড়ে গেলে (ঝঢ়রষষ/খবধশধমব) স্বল্প সময়ের মধ্যে তা কিভাবে অপসারন বা উত্তোলন করা হবে তা হাতে কলমে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রতিটি স্থানেই পড়ে যাওয়া কেমিক্যাল অপসারন করার জন্য ঈযবসরপধষ ঝঢ়রষষ করঃ দেওয়া আছে। কেমিক্যাল ব্যবহারের জায়গায় ঝ.উ.ঝ, চ.চ.ঊ (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী) ব্যবহার না করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে তার পোষ্টার দেয়া হয়েছে। আমাদের কারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল নির্দিষ্ট স্থানে সাধারন কর্মীদের নাগালের বাইরে কেমিক্যাল স্টোরে সংরক্ষিত স্থানে রাখা হয়, যেন কোন অবস্থাতেই সাধারন কর্মীরা কেমিক্যাল এর সংস্পর্শে আসতে না পারে। প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা। রসায়নের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করে তাদের সম্ভাব্য শিক্ষা দেয়া উচিত। কেমিক্যাল দ্বারা ঝুঁকি ঘটলে আতœরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করবে এবং জরুরী ভিত্তিতে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শ্রমিকরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হলে ঝুঁকিপূর্ণ রসায়ন ব্যবহারে ঝুঁকি এড়ানো সহজ হবে বিধায় এব্যাপারে শ্রমিকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।