অগ্নি নির্বাপন নীতি
প্রজ্জলন নীতি থেকে জানা যায় আগুনের উৎপত্তির জন্য ৩টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার অবিচ্ছিন্ন যোগসুত্র অপরিহার্য। নির্বাপন নীতির মূল বিষয় হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় আগুনের উৎপত্তি হয়েছে সেই পক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা অর্থাৎ সেই প্রক্রিয়া ঘটতে না দেওয়া, অর্থাৎ আগুনে ৩টি উপাদান এবং অবিচ্ছিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া এই ৪টির মধ্যে যদি কোন একটিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় বা এদের যোগসূত্রের বিঘœ ঘটানো যায় তবে আগুন থাকবে না। আর এটাই হচ্ছে অগ্নি নির্বাপন নীতি। …
তবে সর্ব প্রকার আগুন নিরাপত্তা একই সূত্রে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। আগুনের কোন সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে তা নির্ভর করে দাহ্য বস্তুর উপর।
প্রজ্ঝলন চতুর্ভুজের সূত্র বিচ্ছিন্নকারী মাধ্যমগুলির মধ্যে পানি একটি মাধ্যম। পানি দ্বারা তাপের সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। তবে কিছু কিছু দাহ্য বস্তু আছে যেখানে পানি ব্যবহার করা যায় না। যেমন- গ্যাস, বিদ্যুৎ বা তেল জাতীয় আগুনে পানি ব্যবহার করা যাবে না।
সুতরাং প্রজ্জলন চতুর্ভূজের ৪টি বাহু আছে। অগ্নি প্রযুক্তিতে ঐ ৪টি বাহু বিচ্ছিন্ন করার ৪টি পদ্ধতি আছে। যেমনঃ
১. স্মুদারিং বা অক্সিজেন সীমিত করণ পদ্ধতিঃ স্মুদারিং হচ্ছে অক্সিজেন সীমিত করে আগুন নির্বাপন করা। স্মুদারিং এজেন্ট হচ্ছে- ফোম, সিওটু ইত্যাদি।
২. কুলিং বা তাপ সীমিত করণ পদ্ধতিঃ এই পক্রিয়ায় আগুনে পানি নিক্ষেপ করা এই মূলনীতির অর্ন্তভূক্ত (কিন্তু সর্বপ্রকার দাহ্য বস্তুতে এই নীতি প্রযোজ্য নয়) কুলিং এজেন্ট হচ্ছে- পানি বা পানি টাইপ এক্সটিংগুইসার।
৩. স্টারভেশন বা দাহ্য বস্তুর সীমিত করণ পদ্ধতিঃ দাহ্য বস্তু সীমিত করার দুটি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
- আগুনের নিকট থেকে দাহ্য বস্তু সরিয়ে নেওয়া অথবা
- আগুনকে দাহ্য বস্তুর নিকট থেকে সরিয়ে নেওয়া।
আগুনকে সরিয়ে যেমন- সিলিং হুকের সাহায্যে বা অন্য কিছুর সাহায্যে আগুনকে দুরে নিক্ষেপ করে দেওয়া যায়। এভাবে দাহ্য বস্তুকে সীমিত করার পদ্ধতি হচ্ছে স্টারভেশন।
৪. পয়জনিং দি ফ্লেম বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন করণ পদ্ধতিঃ অগ্নি প্রজ্ঝলনের ৩টি উপাদানের সাথে যতক্ষন না প্রজ্জলনের অবিচ্ছিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটবে না ততক্ষন পর্যন্ত আগুন জ্বলবে না। সুতরাং অবিচ্ছিন্ন যোগ সূত্রকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারলেই আগুন থাকবে না। প্রজ্জলনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হয় আগুনে পাউডার নিক্ষেপ করে ফলে অবিচ্ছিন্ন যোগসুত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইহাকেই সাধারনত পয়জনিং দি ফ্লেম বলে।
আগুন লাগলে আমাদের করণীয় কি ?
অগ্নিকান্ডের ক্ষতি ভয়াবহ ও অপূরণীয়। জান মালের হেফাজত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। অগ্নিকান্ড থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হলে আগুন লাগার কারণগুলো অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। আল্লাহ্ না করেন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ সাহসের সঙ্গে তা নির্বাপন বা মোকাবেলা করতে হবে।
- আগুন লেগেছে নিশ্চিত হওয়ার পরই ফ্লোরে স্থাপিত ফায়ার এলার্ম বক্স এর গ্লাস সরিয়ে/ভেঙ্গে সুইচ টিপে এলার্ম বাজাবেন।এছাড়া ও ঝুলন্ত চেইন নাড়া দিয়ে অগ্নি ঘন্টা বাজাবেন।
- ফায়ার এলার্ম বা হুইসেল শোনামাত্র ফায়ার ফাইটার ব্যতিরেকে ফ্লোরের সমস্ত লোকজন যত দ্রুত সম্ভব মেশিনের সুইচ অফ করে অথবা হাতের কাজ ফেলে ইভাকুয়েশন প্লান অনুযায়ী সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাবেন। ইলেকট্রিশিয়ান বা ফায়ার ফাইটিং পার্টির দলনেতা দ্রুত ফ্লোরের বৈদ্যুতিক সাবষ্টেশন এবং মেইন সুইচ বোর্ড অফ করবেন।
- ফায়ার ফাইটাররা সিঁড়ির সামনে রক্ষিত ড্রামের পানি, বালি,অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এবং ফায়ার হোস পাইপের সাহায্যে আগুন নিভাতে চেষ্টা করবেন।
- কাহারো গাঁয়ের কাপড়ে আগুন ধরে গেলে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। কোন ক্রমেই দৌড়ানো যাবে না।
- ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে বাহির হওয়ার পথ দেখতে না পেলে দ্রুত বসে হামাগুড়ি দিয়ে বাহির হয়ে আসতে হবে। ধোঁয়া প্রশ্বাসের সংঙ্গে ভিতরে নেওয়া যাবে না। কাপড় অথবা ভেজা টাওয়াল দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে।
- বাথরুম/টয়লেট,বিল্ডিং এর ছাঁদ বা অন্য কোন স্থানে কেহ আটকা পড়ল কিনা তা মহিলা বাথরুমে একজন মহিলা এবং পুরুষ বাথরুমে একজন পুরুষ চেক করবেন।
- কেহ ভয় পেয়ে জানালা দিয়ে নামতে চেষ্টা করলে বা লাফ দিতে চাইলে তাকে ফেরাতে হবে এবং সিঁড়ি দিয়ে নামতে সাহায্য করবেন।
- লোকজন সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে কোন ভাবেই ধাক্কাধাক্কি, তাড়াহুড়া, হৈ-চৈ বা কান্নাকাটি, আতংক এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবেন না।
- ফ্যাক্টরী থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ী চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবেন না। সরাসরি নিজের বাসায় চলে যাবে।
- প্রথমে মানুষ এবং পরে মালামাল উদ্ধার করবে।