Select Page

কর্মস্থল পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা

কর্মস্থল পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা
সব কিছু গুছিয়ে রাখাইতো আপনার জন্য কল্যাণকর। একটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্ম পরিবেশ গোটা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। ভালোভাবে ঘর গুছিয়ে রাখার মাধ্যমে কাজের পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব। কর্মস্থল পরিপাটি রাখার অভ্যাস কর্মীকে দক্ষ করে তোলে, নৈতিকভাবে উৎসাহিত করে। দুর্ঘটনা রোধেও এর রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।

অন্যদিকে অগোছালো কর্মস্থলে কাজের উৎসাহ এবং নৈতিকতায় ভাঁটা পড়ে। এর ফলে নিজের যে কোন রকমের বিপদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আলগাভাবে রাখা বস্তুর উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পড়ে যাওয়া। উপর থেকে ছিটকে পড়া বস্তু দ্বারা আঘাত পাওয়া। তৈলাক্ত, স্যাঁতসেঁতে কিংবা নোংরা মেঝেতে পিছলে পড়া। বাইরের দিকে প্রসারিত ধারালো বস্তুতে আঘাত লেগে ছিলে যাওয়া বা ক্ষত হওয়া।  জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দ্বারা দাহ্য পদার্থে অগ্নি সংযোগ। তৈলাক্ত জঞ্জালে স্বতঃস্ফূর্ত অগ্নিকান্ড।

দুর্বল হাউজকিপিং এর কিছু নমুনা

(যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে)
কাজের জায়গায় অতিরিক্ত মালামাল কিংবা বর্জ্য রাখা, গাদা-গাদি করে সরু প্যাসেজ গুলিতে জিনিসপত্র রাখা।  মেশিনের উপর টুলস্ (হাতিয়ার) ফেলে রাখা, মালামাল খুব উঁচু করে বা এলোমেলো করে সাজিয়ে রাখা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া উপকরণ পরিস্কার করার ব্যর্থতা, বর্জ্যের পাত্রগুলোর ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বর্জ্যের কারণে আশে-পাশে সয়লাব হয়ে যাওয়া।  ধারালো বস্তু প্রসারিত হয়ে থাকা, যেমন- তারকাঁটা, তার, ষ্টিলের রশি, ভাঙ্গা কাঁচ, ইত্যাদি। দাহ্য পদার্থ জমিয়ে রাখা, ধূমপানের বিধিনিষেধ পালনে অনীহা। তৈলাক্ত কম্বল এবং বর্জ্য খোলা জায়গায় রাখা।

উত্তম হাউজকিপিং বা পরিপাটি করে নিজের কর্মস্থল সংরক্ষণ করা আপনার নিয়োগকর্তার জন্য একটা ভালো প্রচার। যে প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, সুন্দর এবং দক্ষ পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় তাদের কাজ চালিয়ে যায় তাদের ক্রেতা এবং ক্লায়েন্টরা সেই প্রতিষ্ঠানের উপর বেশি আস্থা রাখে।
মোট কথা ভালো হাউজকিপিং আপনার কর্মস্থলকে কাজের জন্য আরও বেশি নিরাপদ করতে পারে।
পেশাগত পরিবেশে মানুষের যোগ্যতার বিচার বিশ্লেষণ সংক্রান্ত বিদ্যা কিংবা অকুপেশনাল আরগোনমিক্স বলতে কি বুঝায়?
কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আরেগোনমিক্স শব্দটা প্রায়শঃই শোনা যায়। এর সঙ্গে আমরা “রিপিটেটিভ ট্রমা ইনজুরী” (আরটিআই) কারপাল টানেল সিনড্রোম, টেনোসাইনোভাইটভ ইত্যাদি শব্দগুলো শুনতে পাই। তবে এসব অসুস্থাতায় যারা আক্রান্ত কেবলমাত্র তারাই বোঝে এসবের ভয়াবহতা। এগুলোর চিকিৎসা সম্পর্কেও কমবেশী তারাই জানে। কিন্তু যাদের এমন কোনো দুর্গটনাজনিত রোগ হয়নি তারা অবশ্যই ভাগ্যবান।

আসলে “আরগোনমিক্স” হলো কাজের পরিবেশের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়া বা ইন্টারএ্যাকশন। এই যে পরিবেশ তাতে কাজের স্থানের চরম তাপমাত্রা এবং আলোর অবস্থাও বিবেচনায় আসে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরগোনমিক্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো মানব দেহের শক্তি এবং কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা নাকি তার কাজের স্থানে পরিবেশগত অসঙ্গতি এবং হাতিয়ার ব্যবহারে অসাবধানতা বা তাচ্ছিল্যের কারণে বিনষ্ট হতে পারে। এমন কি কখনো বা স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে। উপরোক্ত আঘাতগুলোর মধ্যে আরটিআই যে কোনো লোকের হতে পারে। সামান্য হলেও গোড়াতেই সুচিকিৎসা না করা হলে পরিণতি দুর্বিষহ হতে পারে। শরীরের কোন অঙ্গের মাত্রাধিক ব্যবহারের কারণেও এটা হতে পারে। নির্মাণ শ্রমিক, দ্বাররক্ষী, জেনিটরস, সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত কর্মী ,এ্যসেম্বলী লাইন ওয়ার্কারস, স্বাস্থ্য পরিসেবা কর্মী, খাদ্র পরিবেশক, পেশাজীবী ক্রীড়াবিদ, কম্পিউটার অপারেটর এবং সেক্রেটারীয়াল কর্মীরা এতে আক্রান্ত হয় খুব বেশি।

অস্থির সন্ধি (জয়েন্ট) তে আঘাত প্রাপ্ত হলে কিংবা হাত পাযের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে বারবার ব্যবহার করলে আরটিআই এ আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ভুল আংগিকে কাজ করা, অসম ভার-উত্তোলন (উঠানো), দূরবর্তী কিছু হাতের কাছে আনার চেষ্টায় দেহের কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অযথা বা বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা। এরকম অবস্থা ঘটে শুধুমাত্র কাজের স্থলে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং কাজে ব্যবহার্য হাতিয়ারগুলোর অসংলগ্ন অবস্থানের কারণে। এসব পুনর্বিন্যাস করলেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং আরটিআই’র আশংকা হ্রাস পেতে পারে।

আরগোনমিক্স জনিত আঘাত এড়ানোর উপায় কি?

উপায় হলো এই পরামর্শগুলো মেনে চলা ঃ
বারবার হাতের নাগালের বাইরের কোন কিছু হাতে আনার চেষ্টা না করা।

মাংসপেশীর উপরে দীর্ঘস্থায়ী ভার না দেওয়া। এক নাগাড়ে মাথার উপরের কাজ এড়িয়ে যাওয়া যাতে ঘাড়ের এবং কাঁধের পেশীগুলোতে চাপ না পড়ে।

অসম কিংবা বিকৃত ভঙ্গিমায় দীর্ঘক্ষণ কাজ পরিহার করা।

ঘন্টায় অন্ততঃ একবার কিছুক্ষণের জন্য হলেও হাত-পা ছড়িয়ে বসা যাতে শক্ত মাংসপেশীগুলো নরম, স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ডেস্কে বসে কাজ করলে মেরুদন্ড সোজা এবং পায়ের ভর রাখার জন্য উপযুক্ত আধুনিক নিয়ন্ত্রণযোগ্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা।

হাত এবং কব্জির বারবার ব্যবহার এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে কষ্টসাধ্য ভঙ্গিতে।

যথাযথভাবে/সঠিকভাবে ভারী জিনিস তোলা যাতে মেরুদন্ডে চোট না লাগে।

নতুন ডিজাইনের হাতিয়ার সংগ্রহ করা যা অপেক্ষাকৃত সহজে ব্যবহার করা যায়।

শরীরের কোনো অঙ্গ বা জয়েন্টে বারবার ব্যথা অনুভব করলে সুপারভাইজারকে বলে আরগোনমিক্স জনিত সমস্যা দূর করা।

ব্যথা না কমলে চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করা।

যে সব কারনে আরগোনমিক্স জনিত আঘাত হতে পারে সেসব কাজ সাবধানে সম্পাদন করা।