স্বাস্থ্য বিষয়ক সুবিধাদি
কোন শ্রমিক গুরতর ভাবে জখম হলে বা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও ফ্লোরে ফাষ্ট এইড বক্সসহ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত পর্যাপ্ত সংখ্যক ফাষ্ট এইড কর্মী রয়েছে। ফাষ্ট এইড বক্সটি প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র সহ একজন ফাষ্ট এইড কর্মীর অধীনে থাকে। তদুপরি আমরা মাঝে মাঝেই শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ডাক্তারী চিকিৎসার উপর ট্রেনিং সেশনের ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য বিষয়ে জররী অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপর্ণ এ কারণে এর পদ্ধতিগুলো সন্নিবেশিত হলো ঃ –
কেউ অজ্ঞান হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়গুলো হইলঃ-
১। আহত ব্যক্তিকে একটা সমতল ভুমিতে শুইয়ে দিন এবং তাঁর পাশে হাঁটু গেড়ে বসুন। কপালে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে মাথাটি কাত করে দিন। তাঁর মুখটি হাঁ করে দিন। যদি সে শ্বাস নিতে না পারে তবে কৃত্তিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করুন।
২। আহত ব্যক্তির চিবুক তুলে ধরন যাতে চোয়াল সামনের দিকে যায়।
৩। বড় একটি নিশ্বাস নিন এবং আপনার ঠোঁট তার মুখে চেপে ধরন। এরপর আস্তে আস্তে তার মুখে শ্বাস ছেড়ে দিন।
৪। নিশ্বাসের সঙ্গে তার বুক উঠা নামা করছে কিনা লক্ষ্য করন। যদি উঠে তাহলে আপনার মুখটি সরিয়ে নিন। কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে পর পর দুই বার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং তার হার্টবিট লক্ষ্য করন।
৫। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করন।
হার্টবিট পরীক্ষা ঃ
১। সবচেয়ে নিচের বক্ষের হাড় খুঁজে বের করুন এবং ঘাড়ের মাঝামাঝি অংশ বের করুন।
২। এক হাতের গোড়ালী ঘাড়ের মাঝামাঝি অংশের নিচে রাখুন এবং পাঁজরের নিচে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত চাপ দন পরে চাপ বন্ধ করন।
৩। প্রতি সেকেন্ডে ২ বার ৩ থেকে ৬ বার চাপ দিন এবং একবার দম নিন। এভাবে মোট ৫ বারের পর একবার করে দম দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত হার্টবিট ফিরে আসে।
৪। হার্টবিট ফিরে পেলে চাপ দেয়া বন্ধ করন। কিন্তুু কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজে শ্বাস নিতে পারছেন।
৫। তাকে হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করন।
বিদ্যুতায়িত হলে ঃ
১। বিদ্যুতায়িত ব্যক্তিকে মাটিতে শুইয়ে মাথা এক পাশে কাত করে দিন।
২। কম্বল দিয়ে তাকে ঢেকে রাখুন যাতে সে উঞ্চ থাকে।
৩। যদি সে পিপাসা বোধ করে তবে তার ঠোট ভেজা কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে দিন।
৪। যদি সে অজ্ঞান হয়ে যায় তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস লক্ষ্য করন।
৫। তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করন।
পুড়ে গেলে
১। সাথে সাথে পোড়া অংশটি ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন এবং যতক্ষণ জ্বালা না কমে ততক্ষণ আস্তে আস্তে পোড়া অংশে পানি ঢালুন।
২। যদি ফোস্কা পড়ে তবে এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে (তুলা নয় এমন) জায়গাটি ঢেকে রাখুন।
৩। পানির সাহায্যে পোড়া অংশটি ঠান্ডা করন, ভুলেও পোড়া অংশে ঘষা দিবেন না, বা ফোস্কা পড়লে ফাটাবেন না।
৪। তুলা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পোড়া অংশটি ঢেকে রাখুন।
৫। কি পরিমাণ আঘাত পেয়েছে তা বুঝে তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করন।
প্রচুর রক্তক্ষরণ ঃ
১। যদি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তবে আহত অংশটি তুলে ধরুন এবং চারপাশে চাপ দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত রক্ত বন্ধ হয়।
২। কিছুক্ষণের জন্য চাপ বদ্ধ করুন এবং রুমাল জাতীয় কাপড় পেঁচিয়ে নিন।
৩। ক্ষত অংশের চারপাশে রুমালটি বেঁধে নিন এবং একটি গজের মাধ্যমে ক্ষতটিকে ব্যান্ডেজ করুন (আহতকে তোলার চেষ্টা করবে না এবং ক্ষতটি পরিষ্কারের চেষ্টা করবেন না)।
৪। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
কেটে গেলে ঃ
১। ডেটল বা সেভলন দ্বারা জায়গাটি পরিষ্কার করে নিন।
২। যদি ৫ মিনিটে রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তবে একটি প্যাড ক্ষতটির উপর কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে রাখুন।
৩। ড্রেসিং করে জায়গাটি বেধে রাখুন এবং পরিষ্কার রাখুন।
নাকে রক্ত আসলে ঃ
১। তাকে একটি বেসিনের সামনে নিয়ে মিনিট দশেক নাকে চাপ দিয়ে রাখুন। টেনে রক্ত ভিতরে নেয়া হতে তাকে বিরত রাখুন।
২। এরপরও যদি রক্ত বন্ধ না হয় তবে একটি ভেজা কাপড় তার নাকে ২ মিনিটের জন্য চেপে ধরুন এবং এরপর আবার নাকে চাপ দিয়ে রাখুন।
৩। রক্ত পড়া বন্ধ হবার ঘন্টা চারেক পর্যন্ত নাক দিয়ে বাতাস বের না করতে বলুন।
মাথা বা মুখের ক্ষত ঃ
১। যদি মাথা ফেটে যায় তবে ক্ষত অংশে একটি ভেজা কাপড় জড়িয়ে নিন। এটি ক্ষত স্ফীত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
২। যদি মাথা হতে রক্তক্ষরণ হয় তবে একটি পরিষ্কার কাপড় ক্ষতের উপর চাপ দিয়ে ধরুন।
৩। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
খিচুনী বা গিড়ার টান ঃ
১। যেভাবে ভাল বোধ করে সেভাবে অংশটি রাখুন এবং তাতে বরফ শীতল পানি ঢালুন।
২। গিড়ার চারপাশে তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ রাখুন।
চোখে ময়লা পড়লেঃ
১। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখুন স্বাভাবিক চোখের পানি নিয়ে ময়লাটি ধুয়ে যায় কিনা।
২। যদি তাতে ময়লা না যায় তবে পর্যাপ্ত আলোতে চোখটি নিয়ে আসুন।
৩। হাত নিয়ে আস্তে করে তার চোখ বড় করে খুলুন এবং চোখের সাদা অংশে ময়লা থাকলে একটি পরিষ্কার রুমাল দিয়ে ময়লাটি চোখের কোণে নিয়ে আসুন।
৪। যদি এই পদ্ধতিতে কাজ না হয় তবে ডাক্তার ডাকার ব্যবস্থা করুন।