পোশাক কারখানায় বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা

পোশাক কারখানায় বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা সমুহের বর্ণনা

বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা

সংজ্ঞাঃ বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা বলতে আমরা সাধারনত কোন শ্রমিককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বা শারিরীক নির্যাতন করে অথবা আর্থিক ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়াকে বুঝায়। কল ক্ষেত্রে দেশের বিদ্যমান শ্রম-আইনের আলোকে এবং ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে বলপূর্বক শ্রমিক নিয়োগ মুক্ত একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে। ..

উদাহরন স্বরূপ বলা যায় যদি কোন শ্রমিক ইচ্ছা পোষন করে যে, সে আর চাকুরী করবে না কিন্তু তাকে বলা হলো এখানে চাকুরী না করলে তাকে পূর্বের কাজের পারিশ্রমিক দেয়া হবে না । এ ক্ষেত্রে তার উপর নির্যাতন করা হলো। নিচে  সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

পলিসি পোষ্টেড ঃ সংশ্লিষ্ট অফিস বা মিল কারখানায় যেখানে শ্রমিকের দৃষ্টিগোচর হয় এমন সুবিধা জনক স্থানে  সম্পর্কিত পলিসি বা নীতিমালা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ম্যানেজমেন্ট বা যারা শ্রমিক সুপারভিশন করে তারা ঋড়ৎপবফ খধনড়ঁৎ  সম্পর্কে সচেতন হবে।

উৎকোচ গ্রহনঃ কোন শ্রমিককে নিয়োগদানের সময় তার নিকট হতে কোন টাকা পয়সা বা আর্থিক সহায়তা দান করে এমন কিছু গ্রহন করা যাবে না। এ ধরনের অর্থ গ্রহন  এর আওতা ভুক্ত।

চুক্তি বা ইড়হফবফ ঃ কোন শ্রমিককে নিয়োগদান কালে তার নিকট থেকে বন্ড নেওয়া যাবে না । এমন কোন শর্ত আরোপ করা যাবে না। যাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমন একজন শ্রমিককে বলা হলো আপনাকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে কিন্তু শর্ত হচ্ছে বেতনের ৫% প্রতিমাসে নিয়োগ দাতাকে দিতে হবে। বা বলা হলো আপনাকে কমপক্ষে এই প্রতিষ্ঠানে এক বছর কাজ করতে হবে। নতুবা চাকুরী দেয়া হবে না।  অথবা একজন শ্রমিককে বলা হলো নির্দিষ্ট পরিমান কাজ করতে না পারলে বেতন থেকে ২০% বেতন কেটে রাখা হবে। অথবা বলা হলো আজকে নির্দিষ্ট পরিমান কাজ করতে না পারলে হাজিরা দেয়া হবে না। উল্লেখিত শর্তগুলো  হিসাবে গন্য হয়। নির্দিষ্ট পরিমানের কাজ কোন শ্রমিককে নির্ধারন করে দেয়া যাবে না এবং এজন্য কোন শ্রমিককে শারিরীক বা আর্থিক দন্ডে দন্ডিত করা যাবে না।

ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রদানঃ প্রত্যেক শ্রমিক কর্মঘন্টা চলাকালীন সহকর্মীদের সাথে মেলা মেশায় বাধাপ্রদান করা যাবে না । কর্মঘন্টা চলা কালীন শ্রমিকদেরকে পানি পান করার, খাওয়ার, টয়লেটে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। শ্রমিকদের অভিযোগ কর্মকর্তাদের নিকট প্রকাশ করার স্বাধীনতা দিতে হবে।  কাজ শেষে শ্রমিকদেরকে নিজ নিজ বাসায় যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই কাউকে আটকিয়ে রাখা যাবে না।

স্বেচ্ছাভিত্তিক ওভার টাইমঃ যদি ওভার টাইম করানোর প্রয়োজন হয় তাহলে আগে থেকে শ্রমিকদেরকে জানাতে হবে। শ্রমিকগন স্বেচ্ছায় সম্মত হলে কেবল মাত্র ওভার টাইম করানো যাবে। কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ওভার টাইম করানো যাবে না। একজন শ্রমিককে সপ্তাহে ৬০ ঘন্টার বেশী কাজ করানো যাবে না এবং প্রতি ৭ দিনে তাকে একদিন ছুটি দিতে হবে।

চাকুরীতে পদত্যাগের স্বাধীনতাঃ একজন শ্রমিক স্বেচ্ছায় চাকুরী হতে অবসর নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অবসর নিতে কর্তৃপক্ষকে একমাস পূর্বে নোটিশ প্রদান করবেন। পদত্যাগের আবেদন করলে তাকে আটকিয়ে রাখা যাবে না। যদি আবেদনকারী একমাস সময়ের ব্যবধানে আবেদন করেন তাহলে কর্তৃৃৃৃৃপক্ষ পদত্যাগ পত্র গ্রহন করতে বাধ্য থাকবেন এবং তার সমস্ত পাওনা পরিশোধ করবেন। এক্ষেত্রে কোনরূপ অজুহাতে তাকে আটকিয়ে রাখা বা তার পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা যাবে না।

পোশাক কারখানায় বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা

অনিচ্ছুক অথবা জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহার করবেন না- চুক্তিবদ্ধ, বন্দী অথবা অন্য যে কোন রকমই হোক না কেন। কম্পোজিট লিঃ শ্রমিকদের নিয়োগের সময় নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করবে যে,

  • সকল নিয়োগ এবং কর্মক্ষেত্র সমূহ যাতে বলপূর্বক শ্রম মুক্ত হয় তার প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি দেওয়া হয়ে থাকে। চাকুরির স্থায়িত্বকাল সম্পর্কে কোন অবস্থাতেই কোনরুপ বিধি আরোপ করে না বা এই সংক্রান্ত কোন নথি ও সংরক্ষন করে না।
  • কোন অবস্থাতেই চাকুরি সংক্রান্ত আসল নথি যেমন, শিক্ষা সনদ, অভিজ্ঞতা সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, চেয়ারম্যান সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদি সংরক্ষণ করবে না, তবে যাচাই এর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এইসব নথি ফেরতযোগ্য হিসেবে তলব করতে পারবে।
  • শ্রমিকদের জবরদস্তি করে নিয়োগ করা হবে না এবং অনুরুপ তারা জাতীয় শ্রম আইন মেনে যে কোন সময় অবসান নিতে পারবে।
  • নিয়োগের পত্র যেমন, শ্রমিকদের আবেদনপত্রে আবেদনকারীর স্বেচ্ছায় যোগদানের বিবৃতি রাখতে হবে। কমপ্লায়েন্স বিভাগ বলপূর্বক বা জামিন বা দায়বদ্ধ কর্মী/শ্রমিক নিয়োগ যাতে না হয় সে বিষয়ে তীক্ষè নজর রাখেন।
  • মজুরী / পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য সুবিধাদি সরাসরি শ্রমিকদের হাতে প্রদান করবে।
  • ওভারটাইম কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে তাদের সম্মতি প্রদানে প্রাক নোটিশ প্রদান করবে; প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ওভারটাইম করতে পারে বা নাও পারে।
  • কোন প্রকার বলপূর্বক শ্রমিক / কর্মী  নিয়োগ কোন ভাবেই সর্মথন করি না।  অনুমতি দিবেঃসকল ক্ষেত্রে শ্রমিক কল্যাণ কমিটি  বা শ্রমিক ইউনিয়ন করতে বাধা প্রদান করা হয় না।
  • কর্মবিরতিতে তাদের স্বাধীনভাবে বিচরণ যতক্ষন না তাদের সেই বিচরণ অন্য কারো কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • চাকুরী ত্যাগের ক্ষেত্রে কোন শ্রমিক / কর্মী  ২ (দুই) মাস পূর্বে নোটিশ দিয়ে চাকুরী ত্যাগ করতে পারে। শ্রমিকদের তাদের কাজের ক্ষেত্র থেকে নির্গমন; সাধারন নিরাপত্তাজনিত কারন ছাড়া।
  • শ্রমিকদের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার; প্রয়োজনমত টয়লেট ব্যবহার; ক্যান্টিন এ যাতায়াত যা তাদের দৈনন্দিন মানব চাহিদার / কল্যাণ সুবিধার প্রয়োজন মেটাতে দরকার হয়।
  • জোরপূর্বক শ্রম বন্ধ করতে অভ্যন্তরীন অভিযোগ উত্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহন।
  • কোন শ্রমিককে নিয়োগদানকালে তার নিকট হতে কোন প্রকার অঙ্গিকারনামা নেয়া হয়না। এই কারখানার কোন স্থাপনায় বন্দী শ্রমিক বা  চুক্তিভুক্ত শ্রমিক নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছেএই কারখানার সকল শ্রমিক কর্মচারী স্ব-ইচ্ছায় চাকুরীতে যোগদান করে এবং স্ব-ইচ্ছায় কাজ করে
  • সকল প্রকার জামিন বা দায়বদ্ধ শ্রমিক/কর্মী  নিয়োগ কোন ভাবেই সর্মথন করি না।
    কাজ চলাকালীন সময়ে ফ্যাক্টরীর প্রতিটি প্রবেশ/বাহির পথ খোলা রাখা ধ্যতামূলক।
  • কর্ম ঘন্টা চলাকালীন সময় শ্রমিকগনকে পানি পান করার, খাওয়ার, টয়লেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করা হয় না
  • যদি কোন সময় জরুরী শিপমেন্টের জন্য ওভার টাইম করানোর প্রয়োজন হয় তবে তা শ্রমিক কল্যান কমিটি  এর
  • সদস্যদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারও ইচ্ছার বিরূদ্ধে জোর করে ওভার টাইম করানো হয় না
  • সকল নিয়োগ আবেদনকারীর স্বেচ্ছায় এবং ভয়-ভীতি হীন ভাবে  হয়ে থাকে। আমরা শ্রমিক / কর্মী  মজুরী সরাসরি শ্রমিক / কর্মীর  হাতে দিয়ে থাকি। কোন শ্রমিককে কোন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা শারীরিক নির্যাতন করে অথবা আর্থিক ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে কাজ আদায় করে নেয়া হয় না
  • শ্রমিকগণ স্বেচ্ছায় চাকুরী হতে অবসর নিতে পারবেন। এ ব্যপারে তাদেরকে কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করা হয় না আমরা এমন কোন প্রতিষ্ঠানের সহিত ব্যবসায় নিয়োজিত থাকি না, যারা বিভিন্ন পর্যায়ে বা বিভিন্ন ভাবে বলপূর্বক বা জামিন বা দায়বদ্ধ শ্রমিক / কর্মী  নিয়োগ করে থাকে।

কোম্পানির আইনসমুহ ঃ

০১. আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোন শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়না।
০২. আমরা বলপূর্বূক শ্রম এবং নিযার্তন করিনা।
০৩. দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শ্রমিক / কর্মচারীদের মজুরী ও ছুটি প্রদান করি।
০৪. আমরা প্রতি মাসের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন, ওভার টাইম ও অন্যান্য ভাতাদী প্রদান করি।
০৫. আমরা দৈনিক ০৮ ঘন্টা ও সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা ওভার টাইমসহ মোট ১০ ঘন্টা করে কাজ করিয়ে থাকি।
০৬. আমরা শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ফাইল সংরক্ষন করি।
০৭. আমরা কমীদের স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা, ইত্যাদী প্রদান করে থাকি।
০৮. আমরা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সকল কারখানা আইন মেনে চলি।
০৯. ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে কোন বিভেদ সৃষ্টি করা হয়না।
১০. আমরা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা মূলক সকল প্রকার আইন কানুন মেনে চলি।
১১. আমরা চাকুরীর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ প্রদান করে থাকি।
১২. কাউকে হয়রানী বা নিপীড়ন করা হয়না।
১৩. চাকুরীতে যোগদানের পরপরই প্রত্যেক শ্রমিক/কর্মচারী প্রয়োজন অনুযায়ী আইন মোতাবেক ছুটি ভোগ করেতে পারেন।
১৪. আমরা শ্রমিকদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকি।

উপসংহারঃ

পোশাক কারখানায় বলপূর্বক শ্রম নীতিমালা সমুহের বর্ণনা – আমরা যদি প্রমান পাই আমাদের সাথে ব্যবসায় নিয়োজিত কোন প্রতিষ্ঠানে বলপূর্বক বা জামিন বা দায়বদ্ধ, কর্মী/শ্রমিক বিভিন্ন পর্যায়ে বা বিভিন্ন ভাবে নিয়োজিত আছে, তাহলে আমরা উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহিত ব্যবসায়িক সর্ম্পক ছেদ করা হয়। বর্ণিত আলোচনা হতে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, কোন শ্রমিককেই তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বিনা অপরাধে কোন আর্থিক দন্ড প্রদান করা যাবে না। শারিরীক নির্যাতনের মাধ্যমে বা বল প্রয়োগ করে কাজ করানো যাবে না।

Comments

Leave a Reply