শৃঙ্খলা নীতিমালা Disciplinery Policy

শৃঙ্খলা নীতিমালা কাকে বলে? Disciplinery Policy গুলো কি কি ?

শৃঙ্খলা নীতিমালা

প্রতিষ্ঠানের জন্য শৃঙ্খলা অপরিহার্য। শৃঙ্খলা বর্হিভূত কোন কাজ প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনা। এ উদ্দেশ্যেই কর্তৃপক্ষ অত্র কারখানায় কর্মরত সকলের ও সকল ইউনিটের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোম্পানীর প্রচলিত বিধি বিধান ও বাংলাদেশের শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নীতিমালা প্রনয়ন করেছে এবং সেই সাথে নীতিমালা ভঙ্গের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহন করেছে । গ্র“পভূক্ত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানব সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এবং যে কোন শ্রমিক,কর্মচারী এবং কর্মকর্তার প্রতি কোন ধরণের অন্যায়, অবিচার বা অমানবিক যেকোন বিষয় এড়ানোর লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ দেশে প্রচলিত শ্রম আইনের আলোকে অত্র নীতিমালা প্রণয়ন করছে।

কোম্পানীতে শৃঙ্খলা জনিত নীতিমালা ভঙ্গের বিরুদ্ধে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় তা নিন্মরূপঃ

  • অপরাধ সমূহঃ(বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৩এর উপধারা ৪(খ) অনুযায়ী।
  • অভ্যাসগত ভাবে কর্মস্থলে দেরীতে অনুপস্থিতি।
  • অভ্যাসগত ভাবে অননুমোদিত অনুপস্থিতি।
  • উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা অথবা সহকর্মী অথবা অধিনস্তদের সহিত দুর্ব্যবহার করা।
  • কর্মে একাগ্রতার অভাবে ইচ্ছাকৃত ভাবে দায়িত্বে অবহেলা, যাহার ফলে কোম্পানীর ক্ষতি হইতে পারে।
  • ইচ্ছাকৃত ভাবে কোম্পানীর সম্পত্তির বা মালামালের অপব্যবহার করা।
  • কোম্পানীর মালামাল চুরি করা।
  • অভ্যাসগতভাবে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা এবং এতদ সংক্রান্ত মেশিনের সেফটিগার্ড ব্যবহার না করা।
  • বেআইনে ফ্যাক্টরীতে গোলযোগ সৃষ্টি করা অথবা অন্যদেরকে বেআইনে গোলযোগের প্ররোচনা দেওয়া।
  • অন্য শ্রমিকের “টাইম কার্ড” মেশিনে সোয়াইপ করা।
  • অধিনস্ত কর্মচারী অথবা সহকর্মীর সাথে র্দুব্যবহার অথবা যৌন হয়রানী অথবা দৈহিক অথবা মৌখিক র্দুব্যবহার করা।
  • অভ্যাসগত ভাবে কারখানার প্রচলিত কোন বিধি বিধান লংঘন।

১। কোন শ্রমিককে বিনা নোটিশে বা নোটিশের পরিবর্তে বিনা মজুরীতে চাকুরী হতে বরখাস্ত করা যাবে, যদি তিনি-
ক) কোন ফৌজদারী অপরাধের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত হন; অথবা
খ) অনুচ্ছেদ ২-এ বর্ণিত অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
– ধারা ২৩ (১), বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

২। নিুলিখিত কাজগুলো অসদাচরণ বলে গণ্য হবে ঃ-

ক) উপরস্থের কোন আইনসংগত বা যুক্তিসঙ্গত আদেশ মানার ক্ষেত্রে এককভাবে বা অন্যের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অবাধ্যতা;
খ) মালিকের ব্যবসা বা সম্পত্তি সম্পর্কে চুরি, প্রতারণা বা অসাধুতা;
গ) মালিকের অধীনে তার বা অন্য কোন শ্রমিকের চাকুরী সংক্রান্ত ব্যাপারে ঘুষ গ্রহন বা প্রদান;
ঘ) বিনা ছুটিতে অভ্যাসগত অনুপস্থিতি অথবা ছুটি না নিয়ে এক সঙ্গে দশ দিনের
অধিক সময় অনুপস্থিতি;
ট) অভ্যাসগত বিলম্বে উপস্থিতি;
ঠ) প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য কোন আইন, বিধি বা প্রবিধানের অভ্যাসগত লংঘন;
ড) প্রতিষ্ঠানে অশৃঙ্খল বা দাংগা হাংগামামূলক আচরণ অথবা শৃঙ্খলা হানিকর যেকোন কর্ম;
ঢ) কাজে কর্মে অভ্যাসগত গাফিলতি;
ণ) প্রধান পরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত চাকুরী সংক্রান্ত, শৃঙ্খলা বা অসদাচরণসহ, যে কোন বিধির অভ্যাসগত লংঘন।
ত) মালিকের অফিসিয়াল রেকর্ডের রদবদল, জালকরণ, অন্যায় পরিবর্তন, উহার ক্ষতিকরণ বা উহা হারিয়ে ফেলা।
– ধারা ২৩ (৪), বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

৩। অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোন শ্রমিককে অনুচ্ছেদ ১-এর অধীনে চাকুরী হতে বরখাস্তের পরিবর্তে, বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, নিুলিখিত যে কোন শাস্তি প্রদান করা যাবে, যথাঃ-

ক) অপসারণ;
খ) নীচের পদে, গ্রেডে বা বেতন স্কেলে অনধিক এক বৎসর পর্যন্ত আনয়ন;
গ) অনধিক এক বৎসরের জন্য পদোন্নতি বন্ধ;
ঘ) অনধিক এক বৎসরের জন্য মজুরী বৃদ্ধি বন্ধ;
ঙ) অনধিক সাত দিন পর্যন্ত বিনা মজুরীতে বা বিনা খোরাকীতে সাময়িক বরখাস্ত;
চ) ভৎর্সনা ও সতর্কীকরণ।
– ধারা ২৩ (২), বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

৪। অনুচ্ছেদ-১ এর অধীনে বরখাস্তকৃত অথবা অনুচ্ছেদ-৩ এর (ক) এর অধীনে অপসারিত কোন শ্রমিককে, যদি তার অবিচ্ছিন্ন চাকুরীর মেয়াদ অন্যুন এক বৎসর হয়, মালিক ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেক সম্পূর্ণ চাকুরী বৎসরের জন্য চৌদ্দ দিনের মজুরী প্রদান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোন শ্রমিককে অনুচ্ছেদ-২ এর (খ) এর অধীনে অসদাচরণের জন্য কোন শ্রমিককে বরখাস্ত করা হলে তিনি কোন ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
– ধারা ২৩ (৩), বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

৫। শাস্তির পদ্ধতি ঃ অনুচ্ছেদ-১ এর অধীনে কোন শ্রমিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে না, যদি না-
ক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখিতভাবে করা হয়;
খ) অভিযোগের একটি কপি তাকে দেয়া হয় এবং এর জবাব দেয়ার জন্য অন্তত সাত দিন সময় দেয়া হয়;
গ) তাকে শুনানীর সুযোগ দেয়া হয়;
ঘ) তদন্তের পর তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়;
ঙ) মালিক বা ব্যাবস্থাপক বরখাস্তের আদেশ অনুমোদন করেন।
– ধারা ২৪ (১), বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬

৬। কোন তদন্তে অভিযুক্ত শ্রমিককে, প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত এবং তৎকর্তৃক মনোনীত কোন ব্যক্তি সাহায্য করতে পারবেন।

৭। যদি তদন্তে কোন পক্ষ মৌখিক স্বাক্ষ্য প্রদান করেন, তাহলে যার বিরুদ্ধে এই স্বাক্ষ্য প্রদান করা হচ্ছে তিনি সাক্ষীকে জেরা করতে পাবেন।

৮। কোন শ্রমিক অনুচ্ছেদ-১ এর অধীনে সংঘটিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে, যদি তার বিরুদ্ধে অনুচ্ছেদ-৩ এর (চ) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় হবে উক্ত শ্রমিক গড় মাসিক মজুরীর অর্ধেক হারে খোরাকী ভাতা পাবেন।

৯। যদি তদন্তে কোন শ্রমিকের অপরাধ প্রমাণিত না হয়, তাহলে তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে কর্মরত ছিলেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্ত সময়ের জন্য তার খোরাকী ভাতা সমন্বয় সহ, মজুরী প্রদেয় হবে।

১০। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে, শাস্তির আদেশের একটি কপি সংশি¬ষ্ট শ্রমিককে অবশ্যই প্রদান করতে হবে।

১১। যদি কোন শ্রমিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রেরিত কোন নোটিশ, চিঠি, অভিযোগনামা, আদেশ বা অন্য কোন কাগজপত্র গ্রহন করতে অস্বীকার করেন, তাহলে তা তাকে প্রদান করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে এ ক্ষেত্রে উক্ত নোটিশ বা চিঠি বা অভিযোগনামা বা আদেশ এর একটি কপি নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শিত হবে এবং আরেকটি কপি উক্ত শ্রমিকের ঠিকানায় রেজিঃ ডাকযোগে প্রেরণ করতে হবে।

১২। উপরে বর্ণিত বিষয়সমুহ ছাড়াও সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বার্থে প্রচলিত শ্রম আইনে বর্ণিত সকল ধারা এবং উপধারা প্রযোজ্য হবে।

আইডি কার্ড ঃ

সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আইডি কার্ড অত্যাবশ্যকীয়। তাই  প্রতিদিন ফ্যাক্টরীতে প্রবেশ এবং বহির্গমন কালে এই আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং স্বয়ংক্রিয় সময় রক্ষক যন্ত্রে (অটোমেটেড টাইম কিপিং মেশিন) স্পর্শ করে তার হাজিরা সময় নিশ্চিত করতে হবে। আইডি কার্ড ব্যতিত কাউকে অত্র কারখানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না এবং নিরাপত্তা প্রহরী যদি কারো আইডি কার্ড দেখতে চায় তাহলে সকলেই তা দেখাতে বাধ্য থাকবে।

পি পি ই ব্যবহার ঃ

কাজের সুবিধার্থে এবং  ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে অত্র কারখানায় কর্মরত আত্মরক্ষামূলক সরজ্ঞামাদি ব্যবহার করতে হবে।কাটার, সিজার , ভ্রমর, প্যাটার্ন ইত্যাদি নন ইলাস্টিক ড্রসটিং দ্বারা বেধে কাজ করতে। সেফটি গার্ড, নিডল গার্ড,ইয়ার প্লাগও মুখোশ ব্যবহার করতে হবে।

বাইরের জুতা ফ্লোরে ব্যবহার না করা ঃ

ফ্লোরের আপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্নতা/বাহিরের ধূলাবালি/ময়লা ইত্যাদি দ্বারা কর্মস্থানকে অসাস্থকর করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা বিঘিœত যাতে না হয় সেজন্য কেউ বাইরের জুতা ফ্লোরে ব্যবহার করতে পারবেন না। ফ্লোরে ব্যবহার করতে হলে স্পঞ্জের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে এবং তা নিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে না।

অফিসিয়াল রেকর্ড জালিয়াতি ঃ

যদি মালিকের অফিসিয়াল রেকর্ডের রদবদল, জালকরণ, অন্যায় পরিবর্তন, তার ক্ষতিকরণ অথবা হারিয়ে ফেলা হয় তাহলে তা অসদাচরণের মধ্যে পরে ।

শৃঙ্খলা জনিত বিধিমালা

প্রতিষ্ঠনে কর্মরত প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিযম কানুন এবং শ্রম আইনের বিধান সমূহ মেনে কাজ করতে হয় প্রতিষ্ঠা । কিন্তু এর ব্যতয় ঘটলে কর্তৃপক্ষ যদি সংশ্লিস্ট কর্মকর্ত/ কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তবে অচিরেই সে প্রতিষ্ঠানে আর কোন নিয়ম কানুন থাকবে না এবং ঐ প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার সৃস্টি হবে।তাই এ কারণে কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের সকল ধারা মেনে শাস্তির  ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত  পদ্ধতিঅনুসরনকরে থাকেনঃ

  • লঘু অপরাধের জন্য প্রাথমিক ভাবে মৌখিক সতর্ক করা হইবে।
  • যদি একই অপরাধ বার বার সংগঠিত হয় তখন লিখিত ভাবে সতর্ক করা হইবে ( প্রথমবার,দ্বিতীয়বার )।
  • তৃতীয়বার এবং চুড়ান্ত সতর্কপত্র দেওয়া হইবে এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে কেন চাকুরীচ্যুত করা হইবে না তাহার লিখিত কারন দর্শানোর নোটিশ জারী করা হইবে।
  • সংশ্লিষ্ট শ্রমিক লিখিত কারন দর্শানোর নোটিশে জবাব দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তের লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হইবে। তদন্ত কমিটি কর্তৃক অভিযুক্ত অপরাধ অথবা অপরাধ সমূহ যদি সঠিক প্রমানিত হয় তাহা হইলে উক্ত কর্মচারী চাকুরীচ্যুত হইবেন।
  • যদি অপরাধের ধরণ খুব বেশী গুরুতর হয় তাহা হইলে উক্ত শ্রমিককে চাকুরী হইতে অনতিবিলম্বে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হইবে ।

যোগাযোগের মাধ্যমঃ এই কারখানার সব জায়গায়,সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী  সকলেই যাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ হন তার জন্য সাউন্ড সিস্টেমে ঘোষনা, বিভিন্ন প্রকার মোটিভেশনাল ট্রেনিং, মিটিং এর ব্যবস্থা অত্র কারখানার একটি চলমান প্রক্রিয়া ।

ফিডব্যাক ও কন্ট্রোল ঃ

এই পলিসি  কারখানায় প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ সর্বদা  সচেতন এবং সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহন করে। এর পরও যদি পলিসি বাস্তবায়ন না হয় বা বাস্তবায়নের পথে কোন বাধাঁর সস্মুখীন হয়, তবে সদা নিয়ন্ত্রন করার জন্য কার্যকরী পরিষদ ও নির্বাহী পরিচালক ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন। এমনকি মাননীয় ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

পরিশিষ্ঠ ঃ

শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোম্পানীর প্রচলিত বিধি বিধান ও বাংলাদেশ শ্রম আইন -২০০৬ এর প্রতি কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ন শ্রদ্ধাশীল। কেননা শৃঙ্খলাবোধই উন্নত জীবনের প্রতিচ্ছবি।

Comments

2 responses to “শৃঙ্খলা নীতিমালা কাকে বলে? Disciplinery Policy গুলো কি কি ?”

Leave a Reply