অনুযোগ অভিযোগ বা ক্ষোভ সংক্রান্ত

অভিযোগ অনুযোগ বা ক্ষোভ সংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালা

অভিযোগ বা ক্ষোভ

অভিযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বহুবিধ কারণ থেকেই অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে। অভিযোগের সাথে উৎপাদনশীলতা, শ্রমিক ঘূর্ণমায়তা, শ্রম অসন্তোস ইত্যাদি অনেক বিষয় জড়িত। তাই সুন্দর কর্মপরিবেশ ও কর্মসন্তষ্টি বজায় রাখার জন্য অভিযোগ নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরী। অনযোগ অভিযোগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা শ্রমিক-মালিক সকলেরই দায়িত্ব। কার্যক্ষেত্রে যেহেতেু শ্রমিক এবং মধ্য-ব্যবস্থাপকগণ সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে তাই অভিযোগ নিয়ন্ত্রন ও নিরসনের ক্ষেত্রে মধ্য-ব্যবস্থাপকগণের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। …

আইনের সূত্র ঃ

অনুযোগ নীতিমালা বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সংবিধান, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫, আই.এল.ও কনভেনশন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বায়ারের কোড অব কন্ডাক্ট কঠোরভাবে মেনে চলি।

কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে, শ্রমিক কর্মচারীদের সকলপ্রকার অসন্তষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি এবং পারস্পারিক দ্বন্দের অবসান ঘটানোর জন্য একটি নির্ধারিত ও ফলপ্রসূ অভিযোগ পদ্ধতি থাকা জরুরী। কর্মক্ষেত্রে অভিযোগ পদ্ধতি একটি ফলপ্রসূ পদ্ধতি, যা একজন কর্মচারীকে তার অসন্তোষ বা অন্যায় ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করার অধিকার দেয়।

তাই কর্তৃপক্ষ সুন্দর কর্মপরিবেশ, সুষ্ঠ ও সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে একটি নিদিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে অভিযোগ সমূহের সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও ন্যায় সঙ্গত বিচারের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের সন্তষ্টি বজায় রাখতে সবসময় সচেষ্ট থাকেন এবং একই সাথে উক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিক লক্ষ্য রাখেন। তবে এ কথা বলা যায় যে মালিক শ্রমিক সর্ম্পক উন্নয়নই অভিযোগ হ্রাসের প্রধান উপায়। অটো গ্র“প এর কারখানা সমূহে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীগন নিম্নোক্ত তিনটি উপায়ে তাদের অভিযোগ/পরামর্শ পেশ করতে পারেন।

অভিযোগ উত্থাপন পদ্ধতি ঃ

শ্রমিক কর্মচারী কর্তৃক দৈনন্দিন ফ্লোরে বিভিন্ন সময়ে দেয়া বিভিন্ন অভিযোগ/ অনুসারে সমাধানের পরও কারখানা কর্তৃক অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নি¤েœ বর্ণিত পদ্ধতি সমুহ অনুসরন করে থাকে-

লিখিত অভিযোগঃ

  • যে কারনে শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে তার যে কোন সমস্যা/অভিযোগ লিখিত ভাবে তার সুপারভাইজার/ লাইনচীপ/ ইনচার্জ/ এডমিন/ এইচ.আর./ কমপ্লায়েন্স এবং ফ্যাক্টরিতে এডমিন.এইচ.আর.এন্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগকে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন যাতে তার সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
  • প্রথমেই সুপারভাইজারকে তার সংশ্লিষ্ট লাইনচীপ এবং স্ব-স্ব ইউনিটের প্রসাশন বিভাগকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন এবং প্রয়োজনবোধে প্রসাশন বিভাগ সরাসরি অভিযোগ নিরুপনের ব্যবস্থা করবেন।

মৌখিক অভিযোগঃ

  • একজন শ্রমিক তার সমস্যা/অভিযোগ লিখিত বা মৌখিকভাবে নিজ সুপারভাইজার/লাইনচীফ/ইনচার্জকে অবহিত করবে।
  • সুপারভাইজার তার লাইন চীফ/ইনচার্জ/পিএম এর সাথে পরামর্শ করে শ্রমিক কর্তৃক উত্থাপিত অসন্তুষ্টি বা অভিযোগের তাৎক্ষনিক সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
  • অভিযোগের জটিলতা বা গুরুত্বের উপর নির্ভর করে পিএম নিজে সমস্যার সমাধান প্রদানে ব্যর্থ হলে বিষয়টি ফ্যাক্টরীর জিএম/এজিএম এবং ফ্যাক্টরী ইনচার্জের গোচরে আনবেন। ফ্যাক্টরী ইনচার্জ নীতিমালা অনুযায়ী সমস্যা সমাধান প্রদান করবেন।
  • একজন শ্রমিক যদি তার সুপারভাইজার, লাইনচীফ এবং পিএম কে লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ পেশ করার পরও যদি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় সেক্ষেত্রে সে সরাসরি কল্যাণ কর্মকর্তা/কমপ্লায়েন্স অফিসারের মাধ্যমে অভিযোগ পেশ করতে পারে অথবা নিজে সরাসরি ফ্যাক্টরী ইনচার্জের নিকট অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে।
  • কল্যাণ কর্মকর্তা যেকোন অভিযোগ প্রাপ্তির পর জঠিলতা ও মাত্রা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পিএম/এজিএম/জিএম এর সাথে আলোচনা করতঃ সমস্যার সমাধান করবেন। গুরুতর এবং গোপনীয় এমন কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে যেখানে মিড লেভেল ম্যানেজার (সুপারভাইজার/লাইন চীফ/সেকশন ইনচার্জ/পিএম/কোয়ালিটি ম্যানেজার)দের অবহিত করা বা সম্পৃক্ত করা অর্থহীন বা ঝুকিপূর্ণ সেখানে কল্যাণ কর্মকর্তা সরাসরি ফ্যাক্টরী ইনচার্জকে বিষয়টি অবহিত করবেন এবং ফ্যাক্টরী ইনচার্জ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অভিযোগ/মতামত/পরামর্শ বাক্স।

কারখানায় প্রতিটি মহিলা ও পুরুষ শ্রমিক টয়লেটে একটি করে এবং শ্রমিকদের ক্যান্টিনে একটি পরামর্শ বাক্স স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে শ্রমিকবৃন্দ তাদের অভিযোগ/অসন্তুষ্টি লিখিতভাবে নিজের পরিচয় গোপন রেখে দাখিল করতে পারে। পরামর্শ বাক্সের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন ঃ

  • অত্র কারখানার প্রতিটি পুরুষ এবং মহিলা টয়লেট একটি করে পরামর্শ বা অভিযোগ বাক্স দেওয়া আছে। যার মাধ্যমে শ্রমিকগন তাদের অভিযোগ কিংবা অসুন্তুষ্টি লিখিত আকারে নিজের পরিচয় গোপন করে দাখিল করতে পারেন।পরামর্শ বাক্স এমনভাবে স্থাপন করা আছে যাতে শ্রমিক কর্মচারীবৃন্দ কোন প্রকার ভয়-ভীতি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া সহজে এবং নির্বিঘেœ /পরামর্শ/মতামত পেশ করতে পারে।
  • পরামর্শ বাক্সে একজন শ্রমিক তার পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জমা করতে পারে।
  • পরামর্শ বাক্স সর্বদা তালাবদ্ধ থাকে এবং এর চাবি শুধুমাত্র কল্যাণ কর্মকর্তা ও ফ্যাক্টরী ইনচার্জ এর নিকট থাকে এবং উভয়ের যে কোন একজন প্রতিদিন অন্ততঃ দুইবার পরামর্শ বাক্স খুলে থাকেন।
  • প্রতিটি অভিযোগ একটি রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি লিখিত অভিযোগগুলো পৃথক একটি ফাইলে সংরক্ষন করা হয়। ফ্যাক্টরী ইনচার্জ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে প্রতিটি অভিযোগ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।
  • উত্থাপিত অভিযোগ সাধারণ ধরনের হলে গৃহীত ব্যবস্থা নোটিশের মাধ্যমে সকলকে জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। গোপনীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীকে অবহিত করে তার স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। গোপনীয় গুরুতর অভিযোগ পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয় যাতে করে অভিযোগকারী কোন প্রকার হয়রানির সম্মুখীন না হয় বা তার নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়।
  • নিরপেক্ষ সামাজিক নিরীক্ষা। হিউম্যান রিসোর্স ও কমপ্লায়েন্স বিভাগ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অথবা বাইরের স্বাধীন নীরিক্ষকের মাধ্যমে কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক, কর্মচারী ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরাজমান অবস্থার প্রকৃত ও সঠিক অবস্থা জানার জন্য বিভিন্ন সময় নিরপেক্ষ সামাজিক নিরীক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। সামাজিক নিরীক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিসমূহ অনুসরন করে থাকেন।
  • নিরীক্ষক বা নিরীক্ষক দল কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার তত্ত্বাবধান বা হস্তক্ষেপ ব্যতীত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন।
  • নিরীক্ষার পর নিরীক্ষক/নিরীক্ষক দল প্রাপ্ত সকল অভিযোগ নথিভুক্ত করে নিরীক্ষার প্রায় যাবতীয় বিষয় সমূহের সত্যতা যাচাই পূর্বক একটি গোপনীয় রিপোর্ট প্রনয়ণ করে তা সরাসরি ফ্যাক্টরীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা/উপযুক্ত ব্যবস্থা/সিদ্ধান্তের জন্য দাখিল করে থাকেন এবং পরবর্তীতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করে থাকেন।
  • বহির্নিরীক্ষক দ্বারা গৃহীত সামাজিক নিরীক্ষা। অভ্যন্তরীন পর্যবেক্ষন ছাড়াও কৃর্তপক্ষ একজন ফ্যাক্টরী বর্হিভূত মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে থাকে যিনি কর্তৃপক্ষের কোনরূপ মধ্যস্ততা ছাড়াই স্বাধীনভাবে শ্রমিকদের মতামত গ্রহন করেন। এই মধ্যস্থতাকারী তার অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি রিপোর্ট তৈরী করে কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষ এই রিপোর্টে কোন অসামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ থাকলে সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

এইচ.আর বিভাগ

  • গ্রিভেন্স পলিসি বাস্তবায়নেরক্ষেত্রে এইচ.আর বিভাগ নি¤œলিখিত রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করে, যথা
  • পারসোন্যাল ফাইল,
  • নিয়োগপত্র
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সনদপত্রের ফটোকপি)
  • হাজিরা কার্ড
  • শ্রমিকের হাজিরা বহি
  • ওভারটাইম শীট
  • ছুটির রেজিষ্টার
  • সার্বিস বহি

কমপ্লায়েন্স বিভাগ ঃ

সকল শ্রমিককে নিয়মিত বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং তার রেকর্ড রাখা কমপ্লায়েন্স বিভাগের দায়িত্ব। নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে সিনিঃ কমপ্লায়েন্স অফিসার/ওয়েলফেয়ার অফিসার প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণের বিষয়সমূহ নি¤œরূপ। যথা,

  • কোম্পানীর নিয়োগ ও অন্যান্য নীতিমালা।
  • বেতন ও ওভার টাইম।
  • কর্তন পলিসি।
  • ছুটি ও অবকাশ।
  • মুক্ত দরজা নীতি।
  • হয়রানী ও উৎপীড়নমুক্ত কর্ম পরিবেশ।
  • অভিযোগ নীতিমালা।
  • অংশগ্রহনকারী কমিটি।
  • কোড অফ কন্ডাক্ট।
  • সচেতনতা।
  • পরিবেশ নিরাপত্তা ও স্বাস্থবিধি ।

ইন্টারনাল অডিটরের দায়িত্ব ঃ

গ্রিভেন্স পলিসি কারখানায় যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা সেক্ষেত্রে ইন্টারনাল অডিটর নি¤œলিখিত রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করেন, যথা
০ ইন্টারনাল অডিট রিপোর্ট
০ ইন্টারনাল সামারী অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ম্যানেজমেন্ট সভার রেকর্ড
০ কারেকক্টিভ এ্যাকশান প্ল্যান রেকর্ড
০ মনিটরিং রিপোর্ট

যোগাযোগ প্রনালী ঃ

পলিসি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুই ভাবে যোগাযোগ সম্পাদন করা হয়। যথা,
১. ইনটারনাল কম্যুনিকেশন ও
২. এক্সটারনাল কম্যুনিকেশন।

ইনটারনাল কম্যুনিকেশন ঃ একই বিভাগের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি বিভাগে সহকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভার মাধ্যমে কর্মপদ্ধতি নির্ধারন করা হয়।

এক্সটারনাল কম্যুনিকেশন ঃ এক বিভাগের সাথে অন্য বিভাগের পারষ্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট মিটিং, অফিস আদেশ, নোটিশজারী, পি.এ. সিসটেম, এওয়ারনেসট্রেনিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে এক্সটারনাল কম্যুনিকেশন করা হয়।

ফিডব্যাক প্রসিডিউর

সংশ্লিষ্ট পলিসিটি যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তার বাস্তব রূপটি তুলে আনা ইন্টারনাল অডিটরের কাজ। এ দায়িত্ব পালনেরক্ষেত্রে তিনি নি¤œ লিখিত রেকর্ডগুলি সংরক্ষণ করেন। যথা,

  • ইন্টারনাল অডিট রিপোর্ট
  • ইন্টারনাল সামারী অডিট রিপোর্টর ভিত্তিতে ম্যানেজমেন্ট সভার রেকর্ড
  • কারেকক্টিভ এ্যাকশান প্ল্যান রেকর্ড
  • মনিটরিং রিপোর্ট

Posted

in

by

Comments

3 responses to “অভিযোগ অনুযোগ বা ক্ষোভ সংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালা”

Leave a Reply