অগ্নী নিরাপত্তা কি? আগুনের ক্ষেত্রে করনীয় বিষয় সমুহ

জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও পদ্ধতি গুলো কি কি?

জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা

জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গুলো কি কি। আমরা সকলেই জানি পোষাক কারখানায় সাধারণত কাচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয় কাপড় এবং প্যাকিং এর জন্য কার্টুন, যাহা উচ্চ দাহ্য সম্পন্ন। এ কারনে আমাদের উচিত আগুনের ভয়াবহতা থেকে কারখানাকে রক্ষা করার জন্য সবসময় পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করা। কারখানার কর্তৃপক্ষ আগুন থেকে কারখানাকে রক্ষা করার জন্য আইনে উল্লেখিত সংখ্যক অগ্নি নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নি নির্বাপক কর্মীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে।নিরাপদ কর্মক্ষেত্র একটি অন্যতম মূখ্য বিষয়, যা রক্ষা করার জন্য সকলকে সচেষ্ট থাকতে হয়। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হচেছ কারখানার অভ্যন্তরে ও তার আশেপাশে সকল শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও সুস্থ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য অগ্নিকান্ড প্রতিরোধসহ অন্যান্য জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এভাবে সাজিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ শ্রমিক / কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য খুবই আন্তরিক ও সচেতন। যাতে শ্রমিক / কর্মচারীরা নিরাপদে কাজ করতে পারে। তাই কর্তৃপক্ষ যে কোন বিপদকালীন সময়ে কিছু জরুরী নীতিমালা অবলম্বন করে থাকেন। এর মধ্যে জরুরী অগ্নি পরিকল্পনা রয়েছে। জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সমুহ নিম্নোক্ত ভাবে গ্র্রহন করা হয়েছে। …

অগ্নি কালীন সময়ে ফায়ার সাইরেন বাজাতে হবে ঃ

আগুন লাগার সাথে সাথে / আগুন দেখার সাথে সাথে নিকটবর্তী “ফায়ার এলার্ম সুইচ”  টিপে ফায়ার এলার্ম বাজাতে হবে। তবে আগুন লেগেছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে ফায়ার সাইরেন বা বেল বাজাতে হবে। যে প্রথমে আগুন দেখবেন সে ই নিকটস্থ ফায়ার এলার্ম সুইচ বাজাবেন।

সকল বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে ঃ

ফায়ার এ্যালার্ম সাইরেন শুনার সাথে সাথে নিরাপত্তা কর্মীগন উদ্ধারকাজ পরিচালনার পাশাপাশি নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস অফিস ও হাসপাতালে অগ্নি দুর্ঘটনা সংবাদ জানাবেন। “ ফায়ার এলার্ম ” বাজার / শোনার সাথে সাথে কারখানার বৈদ্যুতিক বিভাগের লোকজন বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করে দিবে। বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করার জন্য মেইনটেন্যান্স টিমের যারা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন কেবল তারাই বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ অফ করবেন।

পি এ সিস্টেমের মাধ্যমে ঘোষনা ঃ

প্রতিটি ফ্লোরে ১০ জন কর্মীকে নিয়ে বিশেষ অগ্নি নির্বাপক দল গঠন করা হয়েছে, যাদের কাজ হলো আগুন লাগলে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দ্বারা অগ্নি নির্বাপন করা। অগ্নি নির্বাপক দলকে প্রশিক্ষনের সময় একটি ব্যাপারে সচেতন করা হয় যদি আগুন ছোট আকারে থাকে তবে অগ্নি নির্বাপন  করা সহজ এবং অগ্নি নির্বাপনের সময় নিশ্চিত হোন আপনি ফ্লোরে একা নন। ফায়ার সেইফটি টিম ফায়ার এলার্ম বাজার সাথে সাথে ফায়ার ডিটেকশন কন্ট্রোল প্যানেল মনিটর পর্যবেক্ষন করবেন। ফায়ার ডিটেকশন কন্ট্রোল প্যানেল মনিটরের স্ক্রিনে দেখানো  নটিফিকেশন অনুযায়ী আগুন লেগেছে কিনা তা নিশ্চিত হবেন এবং আগুনের অবস্থান সম্পর্কে পি এ সিস্টেমের মাধ্যমের জরুরী ঘোষনা দিয়ে কারখানার সবাইকে অবহিত করবেন এবং যে বিল্ডিং বা সেকশনে আগুন লেগেছে সেই বিল্ডিং এর ফ্লোর ভিত্তিক সবাইকে নিরাপদে বের হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।

প্রাথমিকভাবে আগুন নিভানোর চেষ্টা করতে হবে ঃ

কারখানার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে প্রধান করে এবং প্রতিটি ফ্লোরের সার্টিফিকেটধারী অগ্নি নির্বাপক কর্মী দ্বারা একটি অগ্নি নিরাপত্তামূলক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের সুত্রপাত হওয়ার সাথে সাথে বা আগুন ছোট হলে কারখানার নিজস্ব প্রশিক্ষন প্রাপ্ত অগ্নি নির্বাপক দল কারখানায় সংরক্ষিত বিভিন্ন  অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (যেমন-ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার হোস পাইপ, ফায়ার বাকেট ইত্যাদি ) ব্যবহার করে আগুন নিভাবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করবে। তবে অগ্নি নির্বাপক যন্্র ব্যবহারের সময় যথাযথ পি পি ই ব্যবহার করবে।

জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল এবং পুলিশ ফাঁড়ি বা থানা ফোন করতে হবে ঃ

জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তারা টেলিফোন করে আঞ্চলিক এবং স্থানীয় দমকল বাহিনীকে আগুনের উৎস, স্থান, কারখানা ভবনের উচ্চতা ,কারখানার অবস্থান, কারখানায় পানির উৎস ও মজুদ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অবগত করবে এবং সাথে সাথে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য উদ্যৎ হবেন। আহত শ্রমিকদের অবস্থা গুরুতর হলে মেডিক্যাল বিভাগের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ফোন করবেন এবং জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য রাখা গাড়ীটি আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে আনা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন।  অগ্নি দূর্ঘটনার সময় জরুরী ভিত্তিতে কারখানার প্রশাসন কর্মকর্তা স্থানীয় থানা বা প্রশাসনকে এবং  শিল্প পুলিশকে টেলিফোন / মোবাইল  করে দূর্ঘটনার বিবরণ জানাবেন।

ফায়ার ফাইটারদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে ঃ

ফায়ার ফাইটাররা প্রতি সেকশনের দলনেতার নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার দ্বায়িত্ব সততা, সাহসিকতা এবং নিষ্ঠার সংগে পালন করবে। আগুনের ধরন অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যেখানে যে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রয়োজন সেখানে সে ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে ঃ

শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত  যারা অর্থাৎ প্রতি ফ্লোরের সেকশন অফিসার বা ইনচার্জদের দায়িত্ব হলো শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং শৃঙ্খলার সাথে বের হতে সাহায্য করা। কারখানার চলাচলের পথ পরিস্কার রাখা যাতে শ্রমিকরা সহজে বিপদ কালীন সময়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারে এবং কারাখানা অভ্যন্তরে  কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে হবে ঃ

উদ্ধারকারী দল ( জবংপঁব ঞবধস) সদস্য গন র্দূঘটনা এরানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ধারকারী সরঞ্জাম নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যায়ক্রমে শারীরিকভাবে দূর্বল ও অক্ষম শ্রমিকদের নিরাপদে বাহির হওয়ার ব্যবস্থা করবেন। যদি কারখানায় আহত ও আটকে পরা শ্রমিক থাকে তাহলে তাদের দ্রত নিরাপদে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবেন।

যে সেকশনে আগুন লেগেছে প্রথমে সেই সেকশন বা ফ্লোর অনুযায়ী শ্রমিকদের বের হতে সহায়তা করবেন।

অগ্নিকান্ডের সময় শ্রমিক / কর্মচারীদের বাহির হওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিরা অর্থাৎ ফ্লোর উদ্ধারকারীর দ্বায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজ নিজ এরিয়ার মধ্যে প্রতিটি রুম / টয়লেট / এবং প্রতিটি স্থান  চেক করে দেখবে যে কোথাও কোন লোক আটকা পড়ে আছে কিনা।

প্রতিটি সিঁড়ির নিকটে ভিড় বা জটলা হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টআ করুন।

সিঁড়িতে কেউ আহত হলে বা পড়ে গেলে তাকে দ্রুত উদ্ধার করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসকদের নিকট প্রেরন করুন।

উদ্ধার শেষে সবাই বের হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফায়ার এসেম্বলী পয়েন্টে সারিবদ্ধভাবে দাড়ানো শ্রমিকদের গননা করুন।

Comments

One response to “জরুরী অগ্নি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও পদ্ধতি গুলো কি কি?”

Leave a Reply