পোশাক শিল্পে অথবা ফ্যাক্টরীতে নিরাপত্তা

পোশাক শিল্পে অথবা ফ্যাক্টরীতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা

পোশাক শিল্পে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা

ব্যক্তিগত/সমষ্টিগত নিরাপত্তা।

পোশাক শিল্পে  বা ফ্যাক্টরীতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও শ্রমিকদেরকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রাথমিক দায়িত্ব। প্রত্যেকে সচেতন থাকলেই দলগত কিংবা সমষ্টিগত নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব। নিরাপত্তার ব্যাপারে যে সমস্ত বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

  • ইউনিট/ফ্যাক্টরীর নির্ধারিত নির্দেশাবলী সর্বদা সঠিকভাবে মেনে চলা।
  • মেশিনে কাজ শুরু করার পূর্বে মেশিন চালনার নিয়ম সঠিকভাবে জেনে নেওয়া/জানানো।
  • পিছ আয়রন কিংবা ফিনিশিং সেকশনে কর্মরত প্রত্যেকের কাজ শুরু করার পূর্বে/কাজ শেষে ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া।
  • নতুন কোন শ্রমিককে অনির্ধারিত কাজে নিয়োজিত করা যাবে না।
  • যে কোন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হলে তড়িৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  • নিষিদ্ধ থিনার/কেমিক্যাল খোলাখোলিভাবে ব্যবহার না করা।
  • প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক ইউনিট/লাইনের আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে সময় নষ্ট না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
  • ক্যান্টিনে খাবার শেষে বর্জ্য দ্রব্য নিদিষ্ট ডাষ্টবিনে রাখা।
  • বয়লার রুমে অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ না করা।
  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি (পি পি ই) সর্বদা ব্যবহার করা/নিশ্চিত করা।
  • টয়লেট ব্যবহার শেষে পানি ব্যবহার/ফ্ল্যাশ করা এবং পানির কল ভালভাবে বন্ধ করা।
  • পোশাক শিল্পে  মহিলাদের জন্য রক্ষিত ঝুঁড়িতে রাখা বর্জ্য দ্রব্য কোনভাবেই কমোডে নিক্ষেপ না করা।
  • টিউব লাইটের শেডের উপর ডাষ্ট জমতে না দেওয়া; কারণ সেসকল স্থানের ময়লায় সহজে আগুন ধরতে সাহায্য করে।
  • পোশাক শিল্পে যে সকল স্থানে আওয়াজ হয় সে এলাকার সব শ্রমিককে ইয়ার প্লাগ/ইয়ার ড্রাম ব্যবহার করা।

যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা।

একজন শ্রমিক যতক্ষন ইউনিটে/ফ্লোরে থাকে, ততক্ষন কোন না কোন মেশিনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তাই মেশিন সংক্রান্ত যে যে নির্দেশ পালন করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

  • যাপ বাটন মেশিনের বেল্টকভার টপ কভার  না থাকিলে মেশিন চালানো যাবেনা।
  • যে সমস্ত মেশিন প্যাডেলের সাথে চেইন দ্বারা সংযোগ থাকে, সেই সমস্ত মেশিন চেইনের পরিবর্তে সুতা, তার কিংবা রশি দ্বারা সংযোগ করে মেশিন চালানো যাবেনা।
  • নাটবোল্ট নেই, ঝালাই খুলে গিয়েছে কিংবা অন্য কোন কারণবশতঃ মেশিনের টেবিল ষ্ট্যান্ড নড়াচড়া করে সেই সমস্ত মেশিনে কাজ করা যাবেনা।
  • প্যাডেল কিংবা ষ্ট্যান্ডের মধ্যে অপারেটর এর শরীরের অংশ ক্ষত হতে পারে এমন কোন ধারালো অবস্থা থাকবেনা।
  • মেশিন চালানোর সময় মেশিন কাঁপলে কিংবা অস্বাভাবিক কোন শব্দ হলে মেশিন চালানো যাবেনা।
  • মেশিন চলাকালীন সময়ে কারও সাথে কথা বলা যাবেনা।
  • অসুস্থ শরীরে কিংবা তন্দ্রা বা ঝিমুনি আসলে মেশিন চালানো যাবেনা।
  • যাপ বাটন মেশিনে প্রতি চাপের সময় আঙ্গুল নিরাপদ স্থানে আছে কিনা সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • যাপ বাটন মেশিনে রিপিট বা ø্যাপের নীচের পার্ট দেওয়ার আগে উপরের পার্ট মোল্ডে দিতে হবে।
  • মেশিন চালাবার সময় শাড়ি, ওড়না, স্যালোয়ার কামিজ যাতে মেশিনের ঘুর্নায়মান অংশের সঙ্গে জড়িয়ে না যায় সেদিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • কাজ করার সময় চুল খোপা বা বেনী বেঁধে কাজ করতে হবে। চুল খোলা অবস্থায় কাজ করা যাবেনা।
  • বাটন হোল, বাটন ষ্টীচ, ওভার লক, বারটেক মেশিনে সেফটি গ্লাস থাকতে হবে অথবা গগলস ব্যবহার করতে হবে।
  • ওভারলক মেশিন এর অপারেটরকে অবশ্যই মুখোশ পরিধান করতে হবে।
  • সকল সুইং মেশিনে নিড্ল সেফটি গাইড থাকতে হবে।
  • কাটিং মেশিনে কাজ করিবার সময় সর্বদা ষ্টীল হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করতে হবে।
  • কাটিং মেশিনের বেস প্লেট মসৃণ থাকতে হবে।
  • কাঁচি কিংবা কাটার কে রশি দিয়ে এমনভাবে বেঁধে রাখতে হবে যাতে পড়ে গেলে কোন ভাবেই আঘাত প্রাপ্ত না হন।

বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা।

বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সুত্রপাত হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ যতক্ষন ইউনিট/ফ্লোর চালু থাকে ততক্ষন বৈদ্যুতিক ব্যবহার অব্যাহত থাকে। তাই এ বিষয়ে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

  • কাজের শুরু/শেষে ইউনিট/ফ্লোরের সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
  • বয়লার কক্ষ পরিদর্শন উপযোগী হতে হবে এবং বাষ্প লাইনে ছিদ্র বা লিকেজ থাকবে না ও খোলা (ন্যাকেট) পাইপ থাকবে না।
  • কোথাও কোন খোলা তার থাকতে পারবে না।
  • ডি.বি বোর্ডে ডেন্জার প্লেট লাগানো থাকবে এবং এর আশে পাশে বৈদ্যুতিক শকের চিকিৎসার নিয়মাবলীর পোষ্টার থাকতে হবে।
  • ডি.বি বোর্ডগুলি পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন ও আশে পাশে কোন মালামাল থাকবে না। বোর্ড তালা দিয়ে আটকানো থাকবে না।
  • পিছ আয়রন সকেট থেকে বিচ্ছিন্ন না করে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না।
  • পিছ আয়রন বা ভ্যাকুয়াম আয়রন পুরাপুরি ঠিক থাকতে হবে এবং সর্বদা আয়রন স্ট্যান্ড এর উপর রাখতে হবে।
  • সকল মেশিনের মটর পুলিকভার থাকতে হবে।
  • কোন মটর, ফ্যান, মেশিনের বাজে শব্দ থাকতে পারবে না।
  • কোন প্রকার ভাঙ্গা বা পোড়া প্লাগ,সকেট, সুইচ থাকবে না।
  • টিউব লাইটের ষ্টারটার সঠিকভাবে থাকতে হবে এবং সমস্ত লাইট এক সঙ্গে জ্বলে উঠবে।
  • সমস্ত লাইট জ্বলতে হবে।
  • মটর বা মেশিনের তার গুলি সুন্দরভাবে ড্রেসিং করা থাকতে হবে।
  • কোন বৈদ্যুতিক তারে আগুন ধরে গেলে কিংবা তারের কোন অংশ থেকে ধোয়া বের হলে কী করণীয় তা বাংলা/ইংরেজীতে লিখে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।

অগ্নি থেকে নিরাপত্তা।

আগুনের কারণে যে ধরনের ক্ষয় ক্ষতি হয় তা কখনও আন্দাজ করা যায় না। অগ্নিকান্ড থেকে নিরাপদ থাকার  দুটো উপায় রয়েছে, যেমন আগুনের সুত্রপাত হতে না দেওয়া এবং  অগ্নিকান্ড হলে পরিকল্পনা মোতাবেক নির্বাপন করে ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা। অগ্নিকান্ড রোধ কিংবা অগ্নি নির্বাপনের জন্য নিম্মোক্ত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী।

  • সম্ভাব্য অগ্নিকান্ডের স্থানগুলো চিহ্নিত করে টীমকে প্রস্তুত রাখা।
  • ফায়ার এলার্ম সুইচ বক্স এর গ্লাস, হাতুরী ও পরিদর্শন ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।  এ ধরনের এলার্ম এর জন্য টাম্বলার সুইচ ব্যবহার করতে হবে এবং সুইচ বক্স গুলো বহির্গমনের নিকটবর্তী স্থানে থাকতে হবে।
  • গং বেল ঝুলানো আছে কিনা দেখতে হবে এবং ফায়ার হোজ ক্যাবিনেট ঠিক আছে কিনা অর্থাৎ ট্যাংকে পানি আছে কিনা, হোজ কেবিনেটের কাছে যাওয়ার রাস্তা পরিস্কার আছে কিনা ইত্যাদি চেক করতে হবে।
  • প্রত্যেকটি মেশিনের মটরগুলিতে মটরপুলি থাকতে হবে। ইন্সপেকশনের আগের দিনই সব ঠিক করে সংশ্লিষ্ট ইনচার্জের মাধ্যমে ওআইসিকে রিপোর্ট করতে হবে।
  • অগ্নি নির্বাপন কমিটিকে সর্বদা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার সম্বন্ধে কাজের উপযোগী করে রাখা।
  • বহির্গমনের বাতি যতক্ষন কাজ চলে ততক্ষন জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
  • ইমার্জেনসি বাতি ঠিক থাকতে হবে।
  • অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সঠিক অবস্থানে থাকতে হবে। মাসিক পরিদর্শন কার্ড ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।
  • ফায়ার মার্ক ঠিক থাকতে হবে এবং অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের কাছে যাওয়ার পথে কোন বাধা থাকতে পারবে না।

Posted

in

by

Comments

5 responses to “পোশাক শিল্পে অথবা ফ্যাক্টরীতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা”

Leave a Reply