নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি

পোশাক শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থার

অগ্নিকান্ডের ক্ষতি ভয়াবহ ও অপূরণীয়। জান মালের হেফাজত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। অগ্নিকান্ড থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই তা প্রতিরোধ করতে হবে। আল্লাহ্ না করেন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সাহসের সঙ্গে তা নির্বাপন বা মোকাবেলা করতে হবে। দায়িত্ব ও কর্তব্য আয়েশা ক্লোথিং কোং লিঃ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানীমুখি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান। সঠিক সময়ে পোশাক জাহাজীকরণ ও উন্নত মানসম্পন্ন পোশাক রপ্তানী করায়  বাজারে ইহার অবস্থান উল্লেখযোগ্য। এই অভূতপূর্ব সাফল্য বজায় রাখতে সঠিক সময়ে উৎপাদনের বিকল্প নাই। আর এই সঠিক সময়ে উৎপাদনের জন্য চাই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে মেইনটেন্যান্স কো-অর্ডিনেটর হিসাবে তার প্রধানতম দায়িত্বই হল কারখানার প্রয়োজনে সর্বদা বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান করা। রাসায়নিক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (ডিসিপি, সিওটু ও ফোম টাইপ) ঃ কাপড়, বিদ্যুৎ ও তেলের আগুন নির্বাপনের জন্য এ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সমূহ ব্যবহার করা হয়।  …  .

ফায়ার পয়েন্ট ঃ কারখানার প্রতি সিঁড়ির কাছে একটি লোহার ষ্ট্যান্ডে তিনটি বা চারটি খালি বালতি ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং এর পাশে একটি পানি ভর্তি প্লাষ্টিকের ড্রাম (কমপক্ষে ৪৫ গ্যালন পানি ধারণ ক্ষতা সম্পন্ন) রাখা হয়। শুরুতেই আগুন নির্বাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

ফায়ার হোজরীল ঃ এটি পানি দিয়ে আগুন নির্বাপনের একটি ব্যবস্থা। কারখানা ভবনের ছাদে ওভারহেড ট্যাংক থাকে। এ ট্যাঙ্ক থেকে ২ইঞ্চি ডায়া একটি পাইপ ফ্লোরে এটে দয়া হয়। উক্ত পাইপের সাথে একটি ফিমেল কপলিন লাগানো থাকে। একটি হোজ পাইপ উক্ত কপলিনের সাথে লাগিয়ে দেয়া হয় যার মাথায় একটি নজেল থাকে। আগুন লাগলে পানির লাইনের চাবি খুলে দিলে আগুনের দুরে দাড়িয়ে এর সাহোয্যে আগুন নির্বাপন করা যায়।

ফায়ার এ্যালার্ম বা ঘন্টা ঃ এটি দুধরনের হয়। একটি ইলেকট্রনিক এবং অপরটি ম্যানুয়াল। কারখানায় আগুন লাগলে সকলকে সতর্ক করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

ইমার্জেন্সী লাইট বা জরুরী বতি ঃ এটি একটি স্বয়ংক্রিয় লাইট বা বাতি যা আইপিএস বা ব্যাটারীর সাথে সংযুক্ত থাকে। এছাড়া চার্জার লাইটও ও জরুরী বাতি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কারখানার ফ্লোরে এবং সিঁিড়তে এ লাইট স্থাপন করতে হয়। অগ্নি দূর্ঘটনার সময় সাধারণতঃ বিদ্যুৎ থাকে না। তখন জরুরী ভিত্তিতে (বিশেষ করে রাতের বেলায়) কারখানা থেকে বের হওয়ার জন্য এ জরুরী বাতি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

স্মোক ডিটেক্টর ঃ এটি ধোঁয়া নির্দেশক একটি স্বয়ংক্রিয় ছোট যন্ত্র। সাধারণতঃ বন্ডেড ওয়্যার হাউজ বা ষ্টোর রূম এবং যেখানে লোক চলাচল কম সেখানে স্থাপন করা হয়। অগ্নি দূর্ঘটনার সময় ধোঁয়া উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এ যন্ত্রটি সংকেত দিতে থাকে।

পি.এ. সিষ্টেম ঃ এটি একটি যন্ত্র যার সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে সকল ফ্লোরের লোকে সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। এমনকি শুধু একটি নির্দিষ্ট ফ্লোরের লোকর সাথেও কথা বলা সম্ভব। দূর্ঘটনার সময় সকলকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নিদের্শ প্রদানের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

লক কাটার ঃ এটি তালা কাটা বা লোহার গ্রিল কাটার জন্য ব্যবহার করা হয়। কোন কক্ষের চাবি পাওয়া না গেলে বা দূর্ঘটনার সময় কেহ কোন কক্ষে আটকা পড়লে গ্রিল কেটে তাকে উদ্ধার করার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।

ফায়ার হুক ঃ এটি একটি লম্বা লোহার দন্ড যার মাথায় একটি হুক বা আংটা থাকে এবং এর মাথাটি সুচালো থাকে।  দাহ্যবস্তু সরিয়ে  আগুন নিভানোর কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।

ম্যানিলা রোপ ঃ একটি এক ধরণের শক্ত দড়ি বা রশি। অগ্নি দূর্ঘটনায় কেহ ভবনের মধ্যে আটকা পড়লে তাকে উদ্ধারের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

ফেস মাস্ক বা মুখোস ঃ আগুন নির্বাপনের সময় ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটি মুখে পড়ে নিতে হয়।

হ্যান্ড গ্লোভস ঃ এটি বিশেষ ধরণের (অগ্নি প্রতিরোধক) মোজা। আগুন নির্বাপনের পূর্বে হাতে পড়ে নিতে হয়।

ফায়ার ব্লাঙ্কেটবা কম্বল ঃ এটি অগ্নি প্রতিরোধক একটি বিশেষ ধরণের কম্বল। চাপা দিয়ে অথবা এটি পরিধান করে আগুন নিভানোর কাজে এবং অগ্নি দগ্ধ ব্যক্তিকে বহন করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

টর্চ লাইট ঃ অন্ধকারে জরুরী কাজ করার জন্য এবং জরুরী নির্গমন কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ সহ ফার্ষ্ট এইড বক্স ঃ কারখানার কোন শ্রমিক আহত হলে তার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

ফ্লোরের ভিতর আটকা পড়লে কি করবেন  –

(ক) মাথা ঠান্ডা রাখুন, ধৈর্য্য হারাবেন না।

(খ) যদি সিড়িতে ধুয়া বা আগুনের তেজ না থাকে তবে সিড়ি দিয়ে বের হয়ে যেতে চেষ্টা করুন।

(গ) যদি বের হওয়া সম্ভব না হয় তবে এমন স্থানে অবস্থান করুন, যেখানে আগুনের পরিমান কম।

(ঘ) সম্ভব হলে বহির্গমন পথের নিকট অথবা জানালার নিকট অবস্থান করুন, যাতে সহজে আপনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

(ঙ) যেখানেই অবস্থান করুন চেষ্টা করুন বাহিরের কাহারো দৃষ্টি আকর্ষন করতে।

(চ) যদি ফ্লোরে ধুয়ার সৃষ্টি হয় তবে সব জানালা খুলে দিন এবং ফ্লোরের মেঝেতে শুয়ে পড়–ন।

(ছ) যদি রুমের মধ্যে একা আটকা পড়েন তবে দরজা ভালভাবে আটকিয়ে দরজার নিচে কাপড় দিয়ে দিন যাতে ধুয়া ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে এবং জানালার নিকট অবস্থান করুন ও সাহায্য চান।

(জ) ভুলেও জানালা দিয়ে বা ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনি আহত হতে পারেন।

Comments

4 responses to “পোশাক শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি”

Leave a Reply